ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের যত্ন : ডায়াবেটিক রোগী নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর অন্যতম হচ্ছে পায়ের সংক্রমণ ও ঘা। ডায়াবেটিক রোগীর ঘা সহজে সারে না এবং এর ফলে পা কাটতে পর্যন্ত হতে পারে। কেননা দীর্ঘমেয়াদি পচনশীল ঘায়ের আর কোনো চিকিৎসা থাকে না। ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের ঘা নানা বিষয় দ্বারা প্রভাবিত, এর মধ্যে রয়েছে নিউরোপ্যাথি এবং ভাসকুলোপ্যাথি। মোটা ও চিকন দুই প্রকার রক্তনালিই ডায়াবেটিস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
মোটা রক্তনালি আক্রান্ত হলে পায়ে পচন ধরে ও পা কাটার সম্মুখীন হতে হয়। নিউরোপ্যাথির কারণে পায়ে ব্যথাযুক্ত অবসন্নতা থাকে এবং এতে করে বড় ধরনের আঘাত ও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া পায়ের চামড়া শুকিয়ে যায় ও পা ফাটে। ফাটা পায়ে জীবাণুর সংক্রমণ ও ঘায়ের প্রবণতা বাড়ে।
ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের যথাযথ যত্ন নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এছাড়া পায়ের ঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। এতে পায়ের গঠন পর্যবেক্ষণ, বোধশক্তি অনুধাবন ও রক্তসঞ্চালনের অবস্থা পরীক্ষা করা হয়।
ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের যত্ন
ডায়াবেটিক রোগীর প্রতিদিন নিজেই নিজের পা পরীক্ষা করা উচিত। পায়ের প্রতিটি অংশ দেখার জন্য প্রয়োজনে আয়না ব্যবহার করতে পারেন। পায়ের আঙুলগুলোর মাঝের ত্বক ঠিক আছে কিনা, ত্বকে কড়া আছে কিনা এসব লক্ষ্য করতে হবে।
পায়ের ত্বকের যত্ন
পা সন্ধ্যাবেলা বা রাতে হালকা গরম পানি ও কোমল সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুতে হবে। এরপর তোয়ালে দিয়ে পা মুছে নিতে হবে ও লক্ষ রাখতে হবে যে আঙুলের ফাঁকগুলো যেন শুকনো থাকে। ত্বক শুষ্ক বা শীতের দিন হলে হালকা করে পায়ে ক্রিম বা তেল মাখবেন। পায়ে কড়া হলে কখনই নিজে নিজে কাটবেন না। আধুনিক বিশ্বে পায়ের কড়া বা এই ধরনের সমস্যার জন্য “চিরোপেডিস্ট’ রয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশে এরকম সুবিধা নেই। তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন অবশ্যই। চিকিৎসকই আপনার পায়ের কড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও চিকিৎসা দিবেন।
নখের যত্ন
নখ কাটার পূর্বে মিনিট পাঁচেক পা ভিজিয়ে রাখবেন, নখ কখনই ব্লেড বা কাঁচি দিয়ে কাটবেন না, নখ কাটার সময় এক ধার থেকে শুরু করে মাঝামাঝি পর্যন্ত কেটে আবার আরেক ধার থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত কাটতে হবে। নখ কখনই খুব ছোট করে কাটতে যেয়ে চারপাশে ক্ষত সৃষ্টি করবেন না।
ডায়াবেটিক পায়ের জুতা
জুতা পায়ের মাপ মতো হতে হবে।
- জুতা নরম হতে হবে।
- জুতার ভেতরে বাতাস চলাচল থাকতে হবে।
- নারীরা হিলওয়ালা জুতা পরিহার করবেন।
- জুতা কেনার সময় অবশ্যই যেন বিকাল বা সন্ধ্যা না হয়। কারণ এসময় পায়ের আকার একটু বড় থাকে ।
ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের ব্যায়াম
ডায়াবেটিক রোগীর পারের রক্ত সঞ্চালন বিঘ্ন থাকে। তাই পায়ের রক্ত সঞ্চালন ও অস্থিসন্ধির নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা প্রতিরোধের জন্য পায়ের ব্যায়াম প্রয়োজন। হাঁটা, দাঁড়ানো, পায়ের গোড়ালি ও পাতা উঁচু নিচু করার মধ্য দিয়ে পায়ের ব্যায়াম করা যায়।
ডায়াবেটিক রোগীকে পায়ের ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত পায়ের যত্ন নেবার পাশাপাশি ব্যায়ামও করতে হবে এবং সেই সাথে সঠিক জুতা নির্বাচন করতে হবে। পায়ের ত্বকে কোনো পরিবর্তন, কড়া বা ঘা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ডায়াবেটিস ও ভিটামিন সি
যদি আপনি ডায়াবেটিসের রোগী হন তাহলে অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করা আপনার জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু কেন এবং কীভাবে উপকারী তা নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে। ডায়াবেটিস রোগীর ফ্রি র্যাডিকেলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কিনা কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এক পর্যায়ে অন্ধত্ব, স্নায়ুবৈকল্য ও হৃদরোগের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ভিটামিন সি এই রোগ থেকে রক্ষা করে। টক ফল, আলু, ধনেপাতা, টমেটো, বাঁধাকপি ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন সি।