নারী-পুরুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার
এমন অনেক খাবার রয়েছে যা খেলে স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যা কেটে যায়। প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন নারীই ভুগে থাকেন যন্ত্রণাদায়ক মূত্রপথের সংক্রমণে। মূত্রপথে সংক্রমণ হলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা করে, তলপেটেও ব্যথা হয়। এমনই এক সমস্যায় ভুগছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি শেষ বর্ষের ছাত্রী দোলা। এক বছরে অন্তত তিনবার তিনি এই সমস্যায় ভোগেন। একদিন পত্রিকার স্বাস্থ্য কলাম পড়ে তিনি জানতে পারেন ক্রানবেরি ফলের রস এসব সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এর পর থেকে নিয়মিত দোলা খেতে লাগলেন ক্রানবেরির রস। একটানা অনেকদিন খাবার পর তার আর প্রস্রাবের সংক্রমণের সমস্যা রইলো না। তার মনে হলো ক্রানবেরির রসই তাকে সুস্থ করে তুলেছে। ক্রানবেরির রসই একমাত্র খাদ্য নয়। যা বিশেষ বিশেষ রোগকে প্রতিরোধ করে থাকে। এ রকম আরো অনেক খাবারই আছে যা গ্রহণ করলে নারী ও পুরুষ অনেক রোগের হাত থেকে সুরক্ষা পায়।
পুরুষদের জন্য খাদ্য
টমেটো সস
যেসব পুরুষ প্রচুর পরিমাণ টমেটো, টমেটোর সস কিংবা সেদ্ধ করা টমেটো খান তারা প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পান। হার্ভাড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ৪৭ হাজার পুরুষের খাদ্যাভ্যাসের ওপর এক গবেষণা চালিয়েছেন। তারা দেখেছেন, যেসব লোক সপ্তাহে দু থেকে চারবার টমেটোর সস খেয়েছেন তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি যারা সস খাননি তাদের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। এর কারণ হলো টমেটোতে থাকে লাইকোপেন নামক ক্যারোটেনয়েড যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, টমেটোর রস একই ধরনের প্রতিরক্ষাকারী প্রভাব ফেলে না। কারণটা জানা গেছে অন্য একটি গবেষণা থেকে। গবেষণায় দেখা গেছে ভালোভাবে শোষণের জন্য লাইপোকেনকে অবশ্যই কিছু ধরনের চর্বির সাথে রান্না করে নিতে হবে। আর তাই প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে রেহাই পেতে খেতে হবে রান্না করা টমেটো। চিকিৎসকরা সে কারণে খাবার হিসেবে রান্না করা টমেটোর ওপরই জোর দিয়ে থাকেন। তাই প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত রান্না করা টমাটো গ্রহণ করুন।
ঝিনুক
ঝিনুককে বলা হয় ভালোবাসার খাদ্য। বিজ্ঞানও সেটা স্বীকার করে। পুরুষের প্রজননতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ জিঙ্কের চাহিদা মেটাতে দৈনিক দু থেকে তিনটে ঝিনুকই যথেষ্ট। বিজ্ঞানীদের মতে, বয়স ৫০ বছরের বেশি হলে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যায়। এর জন্য দায়ী করা হয় পরিবেশগত অবস্থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুষ্টির অভাবজনিত কারণে টেসটোসটেরন হরমোন কমে যায়। সেক্ষেত্রে এর সমাধান হলো পর্যাপ্ত জিঙ্ক গ্রহণ।
পুরুষদের জন্য জিঙ্ক গ্রহণের সুপারিশকৃত মাত্রা হলো দৈনিক ১৫ মিলিগ্রাম। ৪০ মিলিগ্রামের বেশি গ্রহণ করলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। টেসটোসটেরন এবং শুক্রাণুর মাত্রা কম এমন ২২ জন পুরুষকে ৪৫ থেকে ৫০ দিন ধরে দৈনিক জিঙ্ক সরবরাহ করে এক পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে জিঙ্ক গ্রহণের ফলে এসব লোকের টেসটোসটেরনের মাত্রা এবং শুক্রাণুর পরিমাণ বেড়ে গেছে।
ব্রকলি
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কপি জাতীয় কিছু সবজি যেমন ব্রকলি মূত্রথলির ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করে। এশিয়ান পুরুষরা ব্যাপক মূত্রথলির ক্যান্সারে ভুগে থাকে। বিজ্ঞানীরা প্রায় ৫০ হাজার পুরুষের খাদ্য পরীক্ষা করে দেখেছেন, যারা দশ বছর ধরে সপ্তাহে পাঁচবার বা তার বেশি বার কপি জাতীয় সবজি খেয়েছে তাদের মূত্রথলির ক্যান্সার যারা উক্ত সবজি কালেভদ্রে খেয়েছে তাদের চেয়ে অর্ধেক হয়েছে। মূত্রথলির ক্যান্সার রোধে সত্যিকার অর্থে ব্রকলি এবং বাঁধাকপি সবচেয়ে কার্যকর খাবার।
চিনাবাদামের মাখন
যদি আপনি হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে সকালের নাস্তার টোস্টে চিনাবাদামের মাখন ছড়িয়ে দিন। হৃদরোগ পুরুষ ও নারীর প্রধান ঘাতক, তবে প্রাথমিক বয়সে পুরুষরাই আক্রান্ত হন। বেশি। চিনাবাদামের মাখনে কিছুটা চর্বি থাকে, কিন্তু এ ধরনের চর্বি আপনার জন্য ভালো। চিনাবাদামের মাখনের চর্বি হলো মনো আনস্যাচুরেটেড। এটা ‘ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএল-এর মাত্রাকে কমিয়ে দেয়, তবে উপকারী কোলেস্টরল এইচডিএল-এর মাত্রাকে কমায় না। গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন চিনাবাদামের খাবার হৃদরোগের ঝুঁকিকে কমাতে পারে।
তরমুজ
পঞ্চান্ন বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই উচ্চ রক্তচাপে বেশি ভুগে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এই প্রমাণটা এতই শক্ত যে, সম্প্রতি আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেশন পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং রক্তচাপের সম্পর্কটা স্বীকার করে নিয়েছে।
দৈনিক ২০০০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি পটাশিয়াম গ্রহণ করলে চমৎকার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। তরমুজ এই খনিজের চমৎকার উৎস। প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে তরমুজে বড় এক ফালি তরমুজে থাকে ৬৬৪ মিলিগ্রাম যা একটা কলা কিংবা এক গ্লাস কমলার রসে বিদ্যমান পটাশিয়ামের চেয়েও বেশি।