নূহের জাহাজ প্লাবনের পর কোথায় ভিড়েছিল?

ইসলামের ইতিহাস

নূহের জাহাজ প্লাবনের পর কোথায় ভিড়েছিল?

তাওয়াতে ঐ স্থানের নাম আরারত বলা হয়েছে। হযরত নূহের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ যে ভূখন্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তা দজলা ও ফুরাতের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। আর এ দুটি নদী আর্মেনিয়া পর্বত শ্রেণী থেকে নির্গত হয়েছে এবং পৃথক পৃথক ধারায় প্রবাহিত হয়ে ইরাকের নিম্নাঞ্চলে এসে পরস্পরের সাথে একত্রিত হয়ে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। আর্মেনিয়াম এই পাহাড় আরারাত এলাকায় অসস্থিত। তাই তাওয়াতে এসবকে আরারাতের পাহাড় বলা হয়েছে।

কিন্তু কুরআনে সম্পূর্ণ এলাকার স্থলে ঐ বিশেষ অর্থাৎ জূদী পাহাড়ের বর্ণনা করা হয়েছে যেখানে জাহাজ ভিড়েছিল। তাওরাতের ব্যাখ্যাকারীদের ধারণা এই যে, জুদী ঐ পর্ব্বতশ্রেণীর নাম যা আরারাত ও জর্জিয়ার পর্বতশ্রেণীকে একত্রিত করেছে। তারা এও বলেন যে, সিকান্দরে আযম (মহান আলেকজান্ডজার)-এর সমসামায়িক গ্রীক পুস্তকাদিতেও এর প্রমাণ রয়েছে। আর এই ঐতিহাসিক ঘটনা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে খ্রীষ্ঠীয় অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত ঐ স্থানে একটি উপাসনালয় ও স্বৃতিসৌধেল অস্তিত্ব ছিল যাকে জাহাজের উপাসালয় বলা হত।

জনৈক মুফাসসির হযরত নূহ (আ)-এর পুত্র কেনআনের মুক্তি না পাওয়ার একটি সূক্ষ্ন হেতু বর্ণনা করেচেণ। আর তা হলে হযরত নূহ (আ) নিঃসন্দেহে একজন উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন নবী ও মুসতা জাবুদ দাওয়াত (যাদের সব ফরিয়াদই আল্লাহতাআলা কবুল করেন) ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া অথবা বদদোয়া করাকালে (উভয় অবস্থায়ই) নিজের পুত্রের কথা ভুলে গিয়েছিলেন, যার ফলে কাফির ছেরে তার অবাধ্যতার হেতু যেমন কর্ম তেমন ফল এই নীতি অনুযায়ী পানিতে ডুবে যায়।

হযরত নূহ (আ) যখন তাঁর জাতির সত্য পথ অবলম্বনের ব্যাপারে একেবারে হতাশ হয়ে পড়েন তখন সর্বপ্রথম দোয়া করেন, হে আমার প্রভু, পৃথিবীতে সত্য প্রত্যাখ্যানকারী কোন গৃহবাসীকে অব্যহতি দিও না। তুমি ওদেরকে অব্যাহতি দিলে ওরা তোমার দাসদের বিভ্রান্ত করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে শুধু দুস্কৃতিকারী ও সত্য প্রত্যাখ্যানকারী। (সূরাঃ নূহ, আয়াতঃ২৬-২৭)

তিনি এই দোয়া করার সময় একেবারেই ভুলে যান যে, এই মুহূর্তে কেনআনের হেয়েতের জন্য পৃথভাবে দোয়া করতে হবে অথবা তখন পর্যন্ত তিনি আপন ছেলে কুফর ও অবাধ্যতা সম্পর্ক মোটেই পরিজ্ঞাত ছিলেন না।

দ্বিতীয়বার তিনি আল্লাহর দরবারের ফরিয়াদ করেন, হে আমার প্রভু, তুমি আমাকে আমার পিতামাকে এবং যারা ঈমানদার হয়ে আমার ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাদেরকে এবং ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে ক্ষমা কর। (সূরা ছাফঃ আয়াতঃ২৮)

এক্ষেত্রেও তিনি কেনআনকে তার দোয়ায় অগণ্য করেন নি। অর্থাৎ মুমিন হয়ে সেও তার ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করুক-এমন দোয়া করেন নি তৃতীয়বার তিনি দোয়া করেন, এবং সীমালংঘনকারীদেরকে সর্ম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন কর। (সূরা নূহঃ আয়াতঃ২৮) অতএব যখন দোয়া কবুল হওয়ার মূহূর্ত এসে গেল এবং কেনআন পূর্বের ন্যায়ই অবাধ্য রয়ে গেল তখন পিতৃস্নেহ আল্লাহর ন্যায় বিচার ভিত্তিক সিদ্ধান্তের সামনে উথলে উঠলো। ফলে তাঁকে নিজের অনবহিতির দিকটি উল্লেখ পূর্বক আল্লাহর দরবারে ওজর পেশ করতে হলো। আল্লাহর একজন মর্তবা সম্পন্ন নবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি এ মুহূর্তে বিনীতভাবে নিজেকে আল্লাহর একজন পরিপূর্ণ দাস হিসাবে উপস্থাপিত করেন।

গোপন মাসাআলা

আমাদের ইউটিউব ইউটিব চ্যানেল

Leave a Reply