পবিত্রতা সম্পর্কে মাসয়ালা

পবিত্রতা সম্পর্কে মাসয়ালা : হযরত ইবনে ওমর [রাঃ] হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন, পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল হয় না এবং গনীমতের চুরি করা মালের সদকা কবুল হয় না।” [মুসলিম শরীফ]

ওলামায়ে কেরাম  লিখেছেন যে, হারাম মাল থেকে সদকা করলে তা কবুল হওয়া দূরের কথা এমনকি কুফরেরও আশংকা রয়েছে। যাই হোক এখানে আমাদের আসল আলোচ্য বিষয় হল তাহারাত ও পবিত্রতা

ইসলামী শরীয়তে পবিত্রতার অশেষ ফযীলত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে :-

إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ .

অর্থাৎ : মহান আল্লাহ তা’আলা তওবাকারীদেরকে এবং ভালভাবে পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালবাসেন।

নামায ছহী হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হল, শরীর, কাপড় ও নামাযের জায়গা পবিত্র হওয়া, ওযু থাকা এবং গোসল ফরয হলে গোসল করা। এর কোন একটি ছাড়া নামায হুহী হবে না।

নিম্নে আমরা ওযু, গোসল ও পাক-নাপাকির সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করছি।

ওযুর ফরয কয়টি ও কি কি?

[১] কপালের চুল থেকে নিয়ে থুতনীর নীচ পর্যন্ত এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত চেহারা একবার ধোয়া।

 [২] কনুইসহ উভয় হাত একবার ধোয়া। 

[৩] মাথার এক চতুর্থাংশ একবার মাসহ করা। 

[৪] টাখনু পর্যন্ত উভয় পা একবার ধোয়া।

ওযুর সুন্নত সমূহ

[১] নিয়ত করা।

 [২] বিসমিল্লাহ বলা। 

[৩] প্রথমে কব্জি পর্যন্ত উভয় হাত ধুয়ে নেয়া।

 [৪] কুলি করা। 

[৫] মেসওয়াক করা। 

[৬] তিনবার নাকে পানি দেয়া ও নাক ঝাড়া। 

[৭] প্রতিটি অঙ্গ তিন তিনবার ধোয়া। 

[৮] সমস্ত মাথা এবং কান মাসহ করা।

[৯] হাত পায়ের আঙ্গুল সমূহ খিলাল করা। 

[১০] বিরতিহীনভাবে অর্থাৎ ধোয়া অঙ্গ শুকানোর আগেই পরবর্তী অঙ্গ ধোয়া । 

[১১] আঙ্গুলও তরতীবের সাথে ধোয়া। অর্থাৎ প্রথমে মুখ ধোয়া, তারপর হাত ধোয়া, তারপর মাথা মাসেহ করা, তারপর পা ধোয়া।

ওযুর সুন্নতের কোন একটি ছেড়ে দিলে ওযু হয় কিন্তু সওয়াব কম হয়। 

ওযুর মুস্তাহার সমূহ

[১] হাত পা ধোয়ার সময় ডানদিক থেকে শুরু করা।

[২] গাড় মাসেহ করা । 

[৩] কেবলামুখী হয়ে বসা। 

[৪] প্রথমে হাত পা ভিজা হাত দিয়ে রগড়িয়ে নেয়া যাতে ধোয়ার সময় ভালভাবে পানি পৌঁছে যায়। 

[৫] হাতের আংটি যদি নাড়ানো ছাড়াই পানি পৌঁছে যায় তবুও ভালভাবে নেড়ে নেয়াই মুস্তাহাব। আর যদি নাড়ানো ছাড়া পানি না পৌঁছে তবে আংটি খুলে অথবা নেড়ে পানি পৌঁছানো ফরয। 

[৬] ওযুর সময় অন্যের সাহায্য না নেয়া অর্থাৎ অন্যের হাতে ওষুর অঙ্গ না ধোয়ানো। 

[৭] উঁচু জায়গায় বসা। 

(৮) চোখের কোণ এবং যেসব জায়গায় পানি না পৌঁছার সম্ভাবনা থাকে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা।

[৯] বাঁ হাতে পা ধোয়া। 

[১০] ওযুর শেষে দু’আ পড়া।

ওযুর মাকরূহ সমূহ

[১] নাপাক জায়গায় ওযু করা। 

[২] ডান হাতে নাক পরিষ্কার করা। 

[৩] ওযু করার সময় দুনিয়ার কথা বলা। 

[৪] সুন্নতের খেলাফ ওযু করা। [৫] প্রয়োজনের বেশী বা কম পানি ব্যবহার করা।

[৬] ওযুর অংগে সজোরে পানি নিক্ষেপ করা। FIRE FORTIES

ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ :-

[১] পেশাব পায়খানা করা।

 [২] পিছনের রাস্তা দিয়ে বাতাস বের হওয়া । 

[৩] রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। 

[৪] মুখ ভরে বমি করা।

 [৫] শুয়ে অথবা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। 

[৬] নেশাগ্রস্থ, পাগল বা বেহুশ হয়ে যাওয়া। 

[৭] জানাযা ছাড়া অন্য নামাযে বালেগ নারী-পুরুষের এমন জোরে হাসা যা পাশের ব্যক্তি শুনতে পায়।

ওযুর নিয়ম

পাক বর্তনে পানি নিয়ে উঁচু ও পাক জায়গায় কেবলামুখী হয়ে বসবে। অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে তিনবার কব্জি পর্যন্ত হাত ধোবে। তিনবার কুলি 

করবে। মেসওয়াক করবে। মেসওয়াক না পেলে হাতের আঙ্গুল দ্বারা দাঁত মেজে নিবে। অতঃপর তিনবার নাকে পানি দিয়ে শ্বাসের সাথে নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছাবে। হাত দ্বারা তিনবার নাক ছাফ করবে। অতঃপর কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনী পর্যন্ত এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখ তিনবার ধোবে। অতঃপর কনুই পর্যন্ত প্রথমে ডান হাত পরে বাঁ হাত তিনবার ধোবে। অতঃপর উভয় হাত পানি দ্বারা ভিজিয়ে মাথা মাসেহ করবে। অতঃপর কান মাসেহ করবে। অতঃপ গান মাসেহ করবে। অতঃপর টাখুন পর্যন্ত প্রথমে ডান পা পরে বাঁ পা তিনবার করে ধোবে। অতঃপর ওযুর পরের দু’আ পড়বে। [দোয়ার বর্ণনায় ওযুর দু’আ দেখুন]

মাথা মাসেহ করা পদ্ধতি

প্রথমে পানি দ্বারা হাত ভিজিয়ে উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো একত্রিত করে কপালের চুল থেকে নিয়ে সমস্ত মাথায় হাত বুলিয়ে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যাবে। অতঃপর ঘাড় থেকে উভয় হাতের তালুকে কানের পাশ থেকে এবং আঙ্গুলগুলো মাথার মাঝখান থেকে বুলিয়ে কপাল পর্যন্ত আনবে। অতঃপর কানের উপরি অংশ বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা এবং ভিতরের অংশ শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা এমনভাবে মাসেহ করবে যাতে কানের সব জায়গায় পানি পৌঁছে যায়। এবং উভয় আঙ্গুল কানের ছিদ্রে প্রবেশ করাবে। অতঃপর আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। তবে গলা মাসেহ করবে না। কেননা গলা, মাসেহ করা নিষেধ।

Leave a Comment