মহানবী (সাঃ) ভাষা দক্ষতা

মহানবী (সাঃ) ভাষা দক্ষতা

আল্লাহর রাসূল বলেন-

انا افصح العرب

আমাকে আল্লাহ আরব দেশে প্রেরণ করেছেন, আরবী ভাষায় আমাকে পান্ডিত্য দান করেছেন এবং আমি বিশুদ্ধ আরবী ভাষা জানি। প্রাতিষ্ঠানিক কোন জ্ঞান না থাকার পরেও আল্লাহর রাসূলের মুখ নিসৃত শব্দগুলো ছিল ভাষা শৈলীর দৃষ্টিকোণ থেকে, ভাষা সাহিত্যের মানদন্ডে অত্যন্ত উঁচু মাপের। আজো আল্লাহর রাসূলের মুখ দিয়ে নিসৃত হাদীসগুলো সাহিত্যের সমৃদ্ধ ভান্ডার হিসেবে পরিচিত এবং এ হিসেবে হাদীসের গবেষণা করা হয়। নিঃসন্দেহে কোরআনের পর আরবী সাহিত্যের সবচেয়ে বড় ভান্ডার হল আল্লাহর রাসূলের হাদীস। অত্যন্ত বিশুদ্ধ ভাষায় আমাদের নবীজী কথা বলতেন। নবীগণ অত্যন্ত সুন্দর মাধুর্যপূর্ণ ভাষায় মানুষকে দাওয়াত দেন। এজন্যই তাদের বাণীর প্রভাব মানুষের অন্তরের গভীরে বিম্বিত হয়।

টাকা কামানোর সহজ উপায়

আল্লাহ বলেছেন-

আমি নবী এবং রাসূলকে তাদের ভাষায় অভিজ্ঞ কেন করেছি? যাতে সুন্দর এবং সহজ করে আমার বাণী মানবজাতির কাছে তুলে ধরতে পারে। তাছাড়া সুন্দর ও বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলা উঁচু ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক । নবী-রাসূলগণ ছিলেন বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ।

গর্বিত একুশ

ফেব্রুয়ারী মাস বাংলাদেশের বাংলাভাষী মানুষের জন্য ভাষার মাস। নিজের মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেয়ার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী তারা রাজপথে নেমেছিল এবং গুলির আঘাতে আহত হয়েছিল, শহীদ হয়েছিল, রক্তাক্ত হয়েছিল। এই অঞ্চলের মানুষ রক্ত দিয়ে তাদের মায়ের ভাষাকে হিফাজত করেছে। প্রথমে স্পষ্ট জেনে নিতে হবে যে, যে অঞ্চলে মুসলমান প্রেরিত হবে সে অঞ্চলের ভাষাই হবে তার ভাষা। সে ভাষায় তাকে অভিজ্ঞ হতে হবে । এটা নবী এবং রাসূলদের সুন্নাত । কারণ, নবী-রাসূলরা তার জাতির ভাষায় অভিজ্ঞ ছিলেন। এমন বলা যাবেনা যে, বাংলা ভাষায় হিন্দুরা মিম্বারের ধ্বনি.. কথা বলে, তাদের দেব-দবীর নাম আছে, এই জন্য এই ভাষা মুসলমানদের নয় ।

আরবী ভাষা কোরআন নাযিল হওয়ার আগেতো আবু জেহেল, আবু লাহাবের ভাষা ছিল, কিন্তু কোরআন নাযিল হওয়ার পরে এটা মুসলমানদের ভাষা হয়েছে । দ্বিতীয়ত: ফার্সি ভাষা অগ্নি পূজারীদের ভাষা ছিল, যারা অগ্নি পূজা করত, তারা ফার্সি ভাষায় কথা বলত । ইরান ও পারস্য দেশগুলোতে মুসলমানরা যখন ইসলামের দাওয়াত প্রচার করল সেখানের মানুষ ইসলাম গ্রহণ করল। তখন তারা ফার্সি ভাষাতেই ইসলামের চর্চা শুরু করল। এক পর্যায়ে ফার্সি ভাষা ইসলামী সাহিত্যে দ্বিতীয় নম্বর সমৃদ্ধ ভাষা হয়ে যায়। আল্লামা সা’দী (রহঃ) ফার্সি ফাষায় বোসতাঁ লিখেছেন, গুলিস্তাঁ লিখেছেন, কারিমা লিখেছেন।

ফরিদ উদ্দীন আত্তার (বড় বুযুর্গ), তিনি পান্দেনামা লিখেছেন ফার্সি ভাষায় । ইমাম রূমী (রহঃ) ‘মসনবী’ লিখেছেন ফার্সি ভাষায় । আল্লামা জামী (রহঃ) ফার্সিতে কবিতা লেখেছেন, বড় বড় আলেম, দার্শনিক, কবি-চিন্তাবিদ অগ্নিপূজারিদের ভাষাকে ইসলামী সাহিত্যে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁরা ইসলাম চর্চা করার কারণে ফার্সি ভাষা আরবীর পরে দ্বিতীয় ইসলামী ভাষায় পরিণত হয়েছে। এর পরে উর্দূ ভাষায় অধিক হারে ইসলাম চর্চা করার কারণে তা ইসলামী সমৃদ্ধ ভাষায় পরিণত হয়েছে । অনেক আলেম, মুসলিম চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক উর্দূভাষায় সাহিত্য রচনা করার কারণে ইসলামী সাহিত্যের এক বিশাল ভান্ডার উর্দূ ভাষায় সৃষ্টি হয়েছে। দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল উর্দূতে ইসলামী সাহিত্যের জোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন।

একই ভাবে যদি মুসলমানরা বাংলাভাষা চর্চা করে, তারা ইসলামী সংস্কৃতির প্রভাব এই ভাষাতে সৃষ্টি করতে পারে। অনেক মুসলিম কবি যুগ যুগ ধরে সাহিত্য চর্চা করেছেন বাংলা ভাষায়। কাজি নজরুল ইসলাম পবিত্র কুরআনের বাংলা অনুবাদ কাব্যে রচনার কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে তা পূর্ণ করতে পারেননি। শুধু আমপারা কাব্যে অনুবাদ সমাপ্ত করেছেন । যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত হয়েছে। একইভাবে কবি ফররুখ সহ আরো অনেক কবি ও সাহিত্যিক বাংলা ভাষায় ইসলামী ভাবধারাকে প্রচার করেছেন। বাংলা ভাষা চর্চা করা মুসলমানদের জন্য আবশ্যক এবং বাংলাতে ইসলামী ভাবধারাকে প্রচার করা ও ইসলামী সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত করা তাদের কর্তব্য।

একুশ নয় ৮ই ফাল্গুন :

২১শে ফেব্রুয়ারী যে মহান ব্যক্তিগণ শহীদ হয়েছেন সালাম, বরকত, আবদুল জব্বার প্রমুখ সকলে মুসলমান ছিলেন। তারা বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাষা করার জন্য তাদের আত্মাকে বিসর্জন দিয়েছেন । এই দিনে যেহেতু তারা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন মিম্বারের ধ্বনি… আমাদের উচিৎ ছিল শুরু থেকে এই দিন বাংলা তারিখে পালন করা। অথচ এখানেও আমরা অপসংস্কৃতিতে আচ্ছাদিত। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ছিল ৮ই ফাল্গুন। এই ৮ই ফাল্গুন প্রতি বছর মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা দরকার, যাতে যেই ভাষার জন্য আমার ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছেন সে ভাষার সাথে তারিখে সঙ্গতি থাকে । এখানেও আমাদের একটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্ধ কাজ করছে। একদিকে আমরা এই দিবসকে বাংলা ভাষার দিবস হিসেবে পালন করি, কিন্তু তা পালন করি ইংরেজী তারিখ অনুযায়ী ২১শে ফেব্রুয়ারী । অথচ পালন করা দরকার ছিল ৮ই ফাল্গুন ।

ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি

আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে, একজন মুসলমানের জন্য তার নিজের ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি করা ইবাদত, ঈমানী দায়িত্বের একটি অংশ । নিজের মাতৃভাষাকে ত্যাগ করা ঈমানের অংশ নয় বরং এতে পান্ডিত্য অর্জন করা উচিৎ। যাতে বাংলাভাষা, কোটি কোটি মুসলমানদের এই ভাষা ইসলামের প্রভাবে প্রভাবিত হয় । আমাদের মনে রাখা উচিৎ, যে জাতি নিজের ভাষাকে সমৃদ্ধ করবে সে জাতি নিজেই সমৃদ্ধ হতে পারে। আমাদের ভাষা যদি সমৃদ্ধ হয় তাহলে এই অঞ্চলের মুসলমানরা সমৃদ্ধ হতে পারবে। বি,এ অনার্স থেকে আরম্ভ করে এম.এ এবং তার উপরে বিজ্ঞান, কেমিষ্ট্রি, ফিজিক্স এ জাতীয় সাবজেক্টগুলোতে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করার জন্য বাংলা ভাষায় যথেষ্ট বই খুঁজে পাওয়া যায়না । অবশ্যই তাদেরকে আশ্রয় নিতে হয় ইংরেজী ভাষার। উচ্চ শিক্ষিত হতে হলে বিদেশী ভাষা জানা ছাড়া সম্ভব হয়না।

একইভাবে কোন মানুষ যদি মনে করে বাংলা ভাষায় আমি কুরআন-সুন্নাহ ও ফেকাহর একজন আলেম হব, তাহলে তার জন্য আদৌ তা সম্ভব নয় যে, বাংলা ভাষার মাধ্যমে সে একজন কুরআন, হাদীস ও ফেকাহর উপর বিশেষজ্ঞ হবে। অবশ্যই তাকে আরবী, ফার্সি, উর্দু জানতে হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারী যখন আসে, বই মেলা করা হয়, অনুষ্ঠান করা হয়, তবে সবচেয়ে বেশী লক্ষ করা দরকার, আমাদের ভাষাকে বিভিন্ন জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা। যাতে অন্য ভাষার উপর নির্ভর না করে নিজের ভাষার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষিত হওয়া যায়। এ জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিদেশী বইগুলোকে বাংলা করা উচিৎ। এটা না করে যদি সর্বস্তরে বাংলা চালু করা হয় তখন জাতিকে ধ্বংস করে দেয়া হবে।

কারণ, সর্বস্তরে বাংলা চালু করা হল কিন্তু উচ্চতর লেভেলে বাংলা বই নেই, যখন ছাত্ররা উচ্চতর জ্ঞানার্জনের লক্ষে বাংলা ভাষায় বই পাবেনা, তখন তারা হয়ে যাবে পঙ্গু। তারা উচ্চ শিক্ষিত জাতি হতে পারবেনা। বাংলা মিডিয়ামে পড়ে মেট্রিক পাশ করে, আই, এ পাশ করে অনার্সে গিয়ে দেখল বাংলা বই নেই তখন সে অর্ধ্ব শিক্ষিত হবে, পরিপূর্ণ শিক্ষার্জন তার হবে না। আমরা আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, চাইনিজ, জাপানিজ ছাত্র আমাদের সাথে যারা পড়ত তারা ইংরেজী জানতনা । যে ইংরেজী সাবজেক্ট আল-আজহারে বাধ্যতামূলক ছিল, তাদেরকে দেখতাম পরীক্ষার সময় তাদের মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যেত।

তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা তো একটি উন্নত জাতি ও শিল্পোন্নত দেশের নাগরিক, তোমরা ইংরেজী জাননা কেন? তখন তারা বলল যে, আমাদের দেশে ইংরেজী ভাষাকে এভয়েড করার চেষ্টা করা হয়। আমি বললাম, ইংরেজী শিক্ষাকে বাদ দিয়ে তোমরা উচ্চ শিক্ষিত কি করে হও? তখন তারা বলল, আমাদের চাইনিজ এবং জাপানিজ ভাষায় প্রতিটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত শাখা আছে, সেসব শাখার মৌলিক বই গুলোকে অনুবাদ করে, রচনা করে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। শুধু জাপানি ভাষায় পড়া লেখা করে একজন বড় বিজ্ঞানী হওয়া যায়। একজন বড় শিক্ষাবিদ হওয়া যায়। আমাদের বিদ্বান ও শিক্ষিতদের উচিত নিজের সেক্টরকে বাংলাভাষায় সমৃদ্ধ করা। যাতে আমাদের ভাষার মাধ্যমে মানুষ উচ্চ শিক্ষিত হতে পারে, অন্য ভাষার উপর নির্ভর হতে না হয়।

বিদেশী ভাষা চর্চা

দেশী ভাষাকে সমৃদ্ধ না করে যদি বিদেশী ভাষাকে সেট করা হয় তাহলে একটি জাতি পিছনের দিকে চলে যাবে। পাশাপাশি সকলকে ইংরেজী ভাষাও শিখতে হবে। আন্তর্জাতিক মার্কেটে, আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে বাংলাদেশের মুসলমানরা স্থান পাচ্ছেনা, যেখানে শ্রীলংকা-ভারত স্থান পায় সেখানে ইংরেজী ভাষা না জানার কারণে বাংলাদেশী মুসলমানরা স্থান পাচ্ছেনা । আর শ্রম বাজার থেকে বাংলাদেশী নাগরিকরা দূরে সরে যাওয়ার কারণে অনেকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে দেশ বঞ্চিত হয় । বিদেশী ভাষা শিক্ষা করা যাবে কি না? মুসলমানদের জন্য এ ব্যাপারে ইসলামের আদর্শ কি? মেশকাত শরীফে একটি হাদীস আছে,

আল্লাহর রাসুলের প্রিয় সাহাবী হযরত জায়েদ ইবনে চাবেত, তাকে তিনি ডেকে বললেন হে যাইদ। ইহুদীদের একটি ভাষা আছে হিব্রু ভাষা, তুমি সে ভাষা চর্চা কর এবং শিখে নাও। জায়েদ বিন ছাবেত জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ কেন? তদুত্তরে আল্লাহর রাসূল বললেন যে, তারা আমাদের সম্পর্কে সে ভাষায় অনেক কিছু গেসে, তারা কি লিখে আমরা বুঝিনা, যাতে তাদের কথাগুলো আমরা বুঝতে পারি, তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর আমরা দিতে পারি এজন্য ইহুদীদের এই ভাষা তুমি শিখে নাও । আল্লাহর রাসূল তার জন্য দোয়া করলেন । জায়েদ বলেন, মাত্র ১৫ দিনে আমি একটি ভাষাকে পুরাপুরি শিখে ফেললাম । তাহলে বুঝা যায় অন্য জাতির ভাষা তাদের মাঝে দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে, তাদের কথা বুঝার উদ্দেশ্যে, তাদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন করার উদ্দেশ্যে, ইসলাম কখনো বাধার সৃষ্টি করেনা ।

সাহাবায়ে কেরাম অনেকেই বিদেশী ভাষা জানতেন। আমরা দেখতে পাই সালমান ফারসি তিনি ফার্সি ভাষার লোক ছিলেন। তিনি আরবী ভাষাও শিখেছেন । হযরত বেলাল (রাজিঃ) বিদেশী, হাবশার ভাষাও জানতেন, আরবী ভাষাও জানতেন । এই জাতীয় অনেক সাহাবীর নাম ইতিহাসে আছে, যারা আরবী ভাষাও জানতেন, আবার ভিন্ন জাতির ভাষাও জানতেন। মুসলমানদের অর্থনৈতিক উন্নতি, বস্তুবাদি উন্নতির জন্য যদি বিদেশী ভাষাও আয়ত্ত করতে হয় । তারা তা করতে পারবে। ইসলাম এখানে কোন বাধা সৃষ্টি করে না ।

আরবী ভাষা চর্চার গুরুত্ব

মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হল আরবী ভাষা। আল্লাহ পাক আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছেন । আল্লাহ পাক আমার কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করলেন আরবী ভাষায়। আমার নবীর ভাষা আরবী। আমি মারা যাওয়ার পর আমাকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে আবরী ভাষায়, কেয়ামতের ময়দানে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে আরবী ভাষায়, জান্নাতে আমাকে আরবী ভাষায় কথা বলতে হবে । আমার বন্ধু যদি একজন তুর্কী হয়, সে আমার ভাষা যদি না জেনে তুর্কি ভাষায় চিঠি লিখে, তখন আমার ঘনিষ্ট বন্ধুর ভাষাকে আয়ত্ত করার জন্য, তার চিঠি বুঝার জন্য যে তুর্কি ভাষা জানে আমি তার কাছে ছুটে যাব। কি লিখেছে আমার বন্ধু, আমি এটা জানার চেষ্টা করব। মহান রাব্বুল আলামীন আমাকে আরবী ভাষায় চিঠি প্রেরণ করেছেন। কুরআনতো পবিত্র চিঠি, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিটি মানুষের কাছে । আমি আমার বন্ধুর ভাষাকে বুঝার জন্য, জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ি ।

আল্লাহর দেয়া চিঠিকে বুঝার জন্য আরবী ভাষা কেন শিখবনা? কাজেই একজন মুসলমানের অন্তরে আকুতি এবং আবেগ থাকা উচিৎ। আমি আরবী ভাষা শিখব এবং জানব। একজন মানুষ যদি কুরআনকে বুঝার জন্য আরবী ভাষা শিখেন আল্লাহ পাক তার যতগুলি মুহুর্ত পাক কুরআন শিক্ষার জন্য ব্যয় করেছেন সবগুলি এবাদতের মধ্যে গণ্য করবেন। প্রতি অক্ষরের বিপরীতে আল্লাহ পাক তাকে পূণ্য দান করবেন । আরবদের ভাষা এ জন্য নয়, সৌদি আরবের ভাষা এজন্য নয়, কুয়েতের ভাষা আরবী এজন্য আমি  আরবী ভাষা শিখতে চাইনা বরং কুরআনের ভাষা আরবী, আল্লাহর নবীর ভাষা আরবী । আল্লাহর বাণীকে বুঝার জন্য, নবীর ভাষাকে বুঝার জন্য আমি বয়স্ক অবস্থাতেও যদি চিন্তা এবং চেষ্টা করি এই চেষ্টার বিনিময়ে আল্লাহপাক আমাকে বিশাল সওয়াব দান করবেন। মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হল আরবী ।

আবার আরবী ভাষার গুরুত্ব আছে বলে নিজের মাতৃভাষার গুরুত্ব কমে যাবে এমন নয়। নিজের জাতীয় ভাষায় সাহাবায়ে কেরাম কথা বলেছেন আমরাও পারব এবং কেউ যদি বাংলা ভাষা এজন্য চর্চা করে যে, আমি বাংলা ভাষায় বিশুদ্ধতার্জন করে, কবিতা রচনা করে, আর্টিক্যাল রচনা করে, ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি করে আমি এদেশের মানুষকে ইসলামী ভাবধারা সম্পন্ন করব, তখন বাংলাভাষা চর্চা করা, প্রতিটি অক্ষর চর্চা করা তার জন্য অবশ্যই ইবাদতে গণ্য হবে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহর নবী নিজের মাতৃভাষাকে বিশুদ্ধভাবে জানতেন, আমিও মায়ের ভাষাকে বিশুদ্ধভাবে জানব । এমন চেতনা মনের মধ্যে সৃষ্টি করা দরকার ।

এই মাসের কর্মসূচী

এই মাসে আমাদের নিম্নোক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে ।

(১) আমাদের বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে । আল্লাহর রহমতে ১৯৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ এই দিনকে উদযাপন করলেও কয়েক বছর ধরে ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিটি দেশে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত অর্জন করেছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি বড় অর্জন । কাজেই এই দিনে আমাদের শপথ হবে যে, আমাদের মায়ের ভাষাকে আমরা সমৃদ্ধ করব। এই দিন আমরা বিভিন্ন জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের তত্ত্বকে এই ভাষায় আলোচনা করার মাধ্যমে এবং ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি করার মাধ্যমে এই ভাষাকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করব।

(২) এই ভাষা এই অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের কাছে যেন সুস্থ থাকে, অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব মুক্ত থাকে, শিরকের প্রভাব মুক্ত যেন হয় এজন্য মুসলমানদেরকে কাজ করতে হবে । আগে যেহেতু এটা সংস্কৃতি ভাষা থেকে এসেছে এজন্য এই ভাষাতে অনেক শব্দ আছে যেগুলোতে শিরকের গন্ধ বিদ্যমান। মুসলমানরা এই ভাষাকে ব্যবহার করার সময় শিরক যুক্ত শব্দগুলোকে ত্যাগ করে ইসলামী শব্দের প্রচলন করা দরকার । এই ভাষাকে আমরা যেমন চর্চা করব, এই ভাষাকে ইসলামী ভাষার বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা যাবে না। আজকাল বিভিন্ন সেমিনারের মধ্যে আমরা দেখতে পাই, অনেক বুদ্ধিজীবি বলেন, আরবী হচ্ছে আরবদের ভাষা, এটা কেন আমরা চর্চা করব? আমরা চর্চা করব আমাদের মায়ের ভাষা শুধু বাংলা।

এখানে সুক্ষভাবে একটা কাজ করা হচ্ছে তা এই বাংলাভাষাকে আরবী ভাষার বিপরীতে দাঁড় করিয়ে প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত করা হচ্ছে। আমার মায়ের প্রতি যেমন আবেগ তেমনি আমার মায়ের ভাষার প্রতি আবেগ থাকা স্বাভাবিক। আবেগকে যেন আরবী ভাষার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো না হয় এ ব্যাপারে মুসলমানদেরকে সতর্ক থাকতে হবে । এজন্যই আমি বলছি, আরবী ভাষার প্রতি আমাদের ঈমানী আবেগ আছে আর বাংলাভাষার প্রতি আমাদের একটি স্বভাবজাত আবেগ থাকবে। দুই আবেগকে যাতে সংঘর্ষে লিপ্ত করা না হয়।

বিভিন্ন বক্তব্য, রচনা এবং কলামের মাধ্যমে দুই আবেগকে সাংঘর্ষিক করার একটি সূক্ষ্ণ ষড়যন্ত্র এখানে হচ্ছে। প্রতিটি মুসলিমকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে যে, মুসলমান হিসেবে আমি আরবী ভাষা চর্চা করব তার মানে এ নয় যে, আমি বাংলা ভাষাকে পরিহার করব। আবার বাংলা আমি ভাষাকে চর্চা করব তার মানে এই নয় যে, আমি আরবী ভাষাকে ত্যাগ করব । বলতে চাই আরবী ভাষা আমরা চর্চা করব শুধু তা আরব জাতির ভাষা এজন্য নয় বরং এটা কুরআন এবং সুন্নাহর ভাষা হিসেবে। আল্লাহ পাক একুশের যে গৌরব আমাদেরকে দান করেছেন, তা যেন ইসলামের কল্যাণে, এই অঞ্চলের মুসলমানদের কল্যাণে আমরা ব্যবহার করতে পারি তিনি আমাদেরকে সে তাওফীক দান করুন । আমীন ।

Leave a Comment