রাসূলে কারীম (সা.) এর মাক্কী জীবন

রাসূলে কারীম (সা.) এর মাক্কী জিন্দেগী

الْحَمْدُ لِاَهْلِهِ وَالصَّلوةُ لِاَهْلِهَا أَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ ـ بِسمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ـ خُذِ الْعَفْوَ وَأَمُرُ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ

عَنِ الْجَاهِلِينَ – صَدَقَ اللهُ الْعَظِيمِ

অদ্যকার সাপ্তাহিক জলসার সম্মানিত সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী সুদক্ষ উপস্থাপক ও আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা। আজকের আলোচ্য নবী (সা.)-এর বিষয় সম্পর্কে আপনারা সম্যক অবগত আছেন। আর তা হল, মক্কী জিন্দেগী। আমি এ সম্পর্কে আপনাদের সম্মুখে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করব বলে আশা করছি। ইনশাআল্লাহ ।

সম্মানিত সুধী!

আমি আমার আলোচনাকে দুটি স্তরে ভাগ করে নিচ্ছি। প্রথমতঃ নবী (সা.) এর মাক্কী জিন্দেগীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। দ্বিতীয়তঃ তা থেকে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষা।

প্রথমেই আলোচনা করা যাক রাসূল (সাঃ) এর মক্কী জিন্দেগীর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা সম্পর্কে।

সম্মানিত উপস্থিতি!

নবী কারীম (সা.) এর সমস্ত জীবনই ছিল এক উত্তম আদর্শের মূর্তপ্রতীক । নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে নবীজী স. এর সততার কারণে মক্কাবাসীরা তাঁকে আল-আমীন বলে ডাকত। কিন্তু যখন এই মহামানব নবুওয়াত প্রাপ্ত হলেন, তখন তাঁর উপর নেমে এল চরম নির্যাতন। আর যারা তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন, তাদের উপরও চালানো হলো অমানুষিক জুলুম-অত্যাচার। কিন্তু নিষ্ঠুরতম নির্যাতনে যখন একত্ববাদের ধ্বনিকে স্তব্ধ করা গেলো না মক্কার কাফেররা তখন চাতুরতার আশ্রয় নিল। ওকবা ইবনে আমের (রা.) কে তারা প্রতিনিধি নিযুক্ত করে নবী (সা.) এর নিকট পাঠাল। ওকবা ইবনে আমের (রা.) এসে নবী (সা.) কে বলল- শেষ পর্যন্ত আপনি কি চান? আপনি কি মক্কার রাজত্ব পছন্দ করেন? অথবা কোন সুন্দরী নারীকে বিবাহ করতে চান? কিংবা এটা চান যে, অনেক ধন সম্পদ এনে আপনার পায়ের কাছে স্তূপ করে রাখি? আমরা আপনার সকল কথা মানতে রাজি আছি। আপনি শুধু আপনার ধর্ম প্রচার বন্ধ রাখবেন। প্রতি উত্তরে নবী (সা.) বললেন-

যদি তোমরা আমার ডান হাতে সূর্য ও বাম হাতে চন্দ্ৰও এনে দাও, আর আমার কাজ বন্ধ করতে বল, আমি কখনো রাজি হবো না। তারপর নবী (সা.) পাঠ করলেন-

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَى أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلهُ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلَيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكُ بِعِبَادِةِ رَبِّهِ

أحَدًا

‘হে নবী আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের মতই মানুষ। তবে আমার ওপর অহী অবতীর্ণ হয়। বলে দিন, তোমাদের প্রভু ঐ এক আল্লাহ। সুতরাং যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করে।’ -সূরা কাহাফ : ১১০

কিন্তু মক্কার কাফেররা নবী (সা.) এর কথা মানল না। বরং তারা যখন দেখল যে, এ ভাবেও রাসূল (সা.) কে ক্ষান্ত করা যাবে না, তখন তারা নবী (সা.) কে স্বপরিবারে নির্বাসন দিলো। চরম কষ্টে নবী কারীম (সা.) ও তাঁর সাথীগণ পার করলেন ৩টি বছর। অতঃপর আল্লাহর রহমতে পেলেন মুক্তি। আর উপহার হিসাবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পেলেন ‘মে’রাজ’ নামক এক মহান দৌলত।

নবীজী (সা.) বুঝতে পারলেন যে, মক্কাবাসীদের হৃদয়ের অন্ধকার কুটিরে হেদায়েতের আলো জ্বালানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি মক্কার কাফেররা নবী (সা.) কে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে লাগল। এরপর তারা যখন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, রাতের আঁধারের নিস্তব্ধতায় ইসলামের আলোকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া হবে। অর্থাৎ, তারা যখন প্রিয়নবী (সা.) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করলো তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে নবী (সা.) মদীনার পথে হিজরত করলেন।

সুপ্রিয় সুধী!

এই ছিল নবী কারীম (সা.) এর মাক্কী জীবনের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা । এবার আসুন এর শিক্ষা সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা যাক। এ থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হলো-

১. সত্যের পথে চলতে গেলে বিপদাপদ জুলুম নির্যাতন আসবেই। আর এটাই স্বাভাবিক। ঐ পরিস্থিতিতে আল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

২. আল্লাহ পাক ধৈর্যের প্রতিদান ও সত্যের বিজয় অবশ্যই দিবেন।

৩. হাজার জুলুম নির্যাতন ও প্রলোভনে কখনো সত্যের পথ থেকে সরে দাঁড়ানো যাবে না। ইসলাম প্রচারের প্রয়োজনে দেশ ত্যাগ তথা হিজরত করতে হবে। নবীজী (স.) বলেছেন, আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও। -বুখারী শরীফ

আর এই পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ-প্রান্তর। পরিশেষে কবির ভাষায় শেষ করছি-

দুর্গম গিরি, কান্তার মরু দুস্তর পারাপার। লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিতে যাত্রীরা হুঁশিয়ার।

وَاخِرُ دَعُوَانَا أَنِ الْحَمدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ

নবীজী (সা.)-এর মাদানী জীবন

রাসূলের বক্তৃতা কেমন ছিল?

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন

আমাদের ইউটিউব ইউটিব চ্যানেল

Leave a Comment