শীতে সুস্থ থাকার উপায়

শীতে সুস্থ থাকার উপায় : শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। শুষ্ক আবহাওয়ায় উড়ে বেড়ায় হাজারো রোগ-জীবাণু। এগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অন্যান্য মাধ্যমে শরীরে ঢুকে যে কোনো সময় অসুস্থতা ঘটাতে পারে। পুরুষদের তুলনায় শিশু এবং মহিলাদের এ সময় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কারণ হিসেবে দেখা গেছে পুরুষদের তুলনায় এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। তাই শীতে অসুখ থেকে মুক্ত থাকতে হলে প্রথমেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। কিন্তু কীভাবে?

দুঃশ্চিন্তমুক্ত থাকুন

দুঃশ্চিন্ত, বিষণ্ণতা কিংবা ক্রোধ মস্তিষ্ক থেকে উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং এর ফলে মস্তিষ্ক থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যার নাম নিউরোপেপটাইড। এই হরমোন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। সুতরাং রাগ, দুঃখ-কষ্ট কিংবা কোনো ধরনের উত্তেজনা মনে পুষে রাখবেন না। সব সময় চেষ্টা করবেন দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে ।

ভিড় এড়িয়ে চলুন

যেখানে মনুষের ভিড় সেখানেই রোগ-জীবাণু। শীতে ফ্লুতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। ফ্লুর জন্য দায়ী হলো ভাইরাস। আপনার পাশে ফ্লু-আক্রান্ত কেউ যদি হাঁচি দেয়, আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ভাইরাসগুলো শরীরে প্রবেশ করবে এবং আপনিও ও আক্রান্ত হবেন ফ্লুতে। কর্মস্থলেও কেউ যদি ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন আপনি নিরাপদ দূরত্বে থেকে তার সাথে কথা বলবেন। খেয়াল রাখবেন ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তি যেন আপনার শরীর স্পর্শ করতে না পারে ।

ভিটামিন সি খান।

ভিটামিন সি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শুধু ট্যাবলেট নয়, বিভিন্ন ফলমূল থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন সি, যা একদিকে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করছে অন্যদিকে আপনার ত্বককে করবে মোহনীয়। সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি থাকে আমলকিতে। একটি ১০০ গ্রামের আমলকিতে থাকে ৬০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এর পরেই পেয়ারার স্থান। একটি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে থাকে ২১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। সুতরাং ভিটামিন সি’র জন্য ওষুধ না খেয়ে আপনি ফলমূল, শাক-সবজি খান।

১০০ গ্রামে বাঁধাকপিতে থাকে ১২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ফুলকপিতে থাকে ৯১ মিলিগ্রাম, মুলাতে ৩৪ মিলিগ্রাম, কমলা লেবুতে ৬৮ মিলিগ্রাম, লেবুতে ৬৩ মিলিগ্রাম, বিটে ৮৮ মিলিগ্রাম, পটলে ২৯ মিলিগ্রাম, আলুতে ১৭ মিলিগ্রাম, শিমে ১১ মিলিগ্রাম, শালগমে ১৫ মিলিগ্রাম, বরবটিতে ১৫ মিলিগ্রাম—এসব কিছুই শীতে আপনি বাজারে পাচ্ছেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন

অপরিচ্ছন্নতা রোগ-জীবাণুর বাসা। শীতে আলস্যের জন্য অনেকে কয়েকদিন গোসল করেন না কিংবা শরীরটাকে ঘষামাজা করেন না। কিন্তু এ সময়ে আপনাকে পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। শীতে রোগের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে নিয়মিত গোসল করুন। পানি খুব ঠাণ্ডা থাকলে তাতে একটু গরম পানি মিশিয়ে নিন। পানি যেন শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। দু’বেলা দাঁত ব্রাশ করুন। পোশাক পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখুন। গরমের দিনে যে রকম এক পোশাক দু’দিন পর পর কেচে নিতেন সে অভ্যাসটা বজায় রাখুন।

ত্বকের যত্ন নিন

শীত ত্বকের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। এ সময় বায়ুমণ্ডলের শুষ্কতার কারণে ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়। কারো ত্বক এ সময় ফেটে যায়, যন্ত্রণা করে। অনেকের ঠোঁট তীব্র ব্যথা হয়। এ সময় ত্বকের যত্ন নেয়াটা জরুরি। রাতে শোবার আগে সমস্ত শরীরে অলিভঅয়েল কিংবা লোশন মাখতে হবে। যারা গোসলে নিয়মিত সাবান ব্যবহার করেন তারা এ সময়ে গ্লিসারিনযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন। ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি মাখবেন। যতবার ঠোঁট শুকাবে ততবার জেলি মাখবেন। অনেকে শীতে রোদ পোহান। কারো কারো ধারণা শীতের রোদ শরীরের জন্য ভালো। ধারণাটি ভুল। সত্যিকারার্থে এ সময় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বেশি থাকে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এ সময় রোদে বের হলে সানস্ক্রিন ক্রিম মেখে বেরোতে হবে। নইলে শীতের আরামদায়ক রোদ আপনার ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

মালিশ করে ঠাণ্ডা দূর

সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে, শরীরে মালিশ করার ফলে শিশুদের ঠাণ্ডা কম সময়ে দূর হচ্ছে এবং মারাত্মক পর্যায়ে যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে মালিশের ফলে রোগ প্রতিরোধকারী কোষ তৈরি হয়, যা কিনা ঠাণ্ডার জন্য দায়ী ভাইরাসের সাথে লড়াই করে। এমনকি শ্বাসকষ্ট কিংবা হাঁপানির বাচ্চাদের জন্যও বুক ও পিঠের মালিশ রোগ উপশমে সহায়তা করে। এজন্যই হয়তো পুরনো দিনে নিয়মিত বাচ্চাদের মালিশ করা হতো। নতুন মায়েরাও পুনরুদ্দ্যমে শুরু করুন পুরনো এই পদ্ধতি। সুস্থ থাকুক সবার শিশু।

স্ট্রোক এড়াবেন কীভাবে

হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায়

কিডনি রোগের লক্ষণ ও করণীয়

আমাদের ইউটিউব ইউটিব চ্যানেল

Leave a Comment