বেনামাযীর শাস্তি কি?
06:16:24 12/03/2023
বেনামাযীর শাস্তি কি?
বেনামাযীর কিয়ামতের অবস্থা : হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, “কিয়ামতের দিবসে নামাযী ব্যক্তির নামায নূরে রুপান্তরিত হবে এবং তার ঈমানের দলিল ও নাজাতের উপায় হবে। পক্ষান্তরে নামাযে গাফেল ব্যক্তি কিয়ামতের দিন কারুন, হামান, ফিরআউন ও উবাই ইবনে খলফের সাথে হাশর হবে।" [মিশকাত শরীফ]
হাদীসের এ কঠোর হুশিয়ারি শোনার পর নামাযে গাফেল ব্যক্তিদের অন্তর কেঁপে উঠা উচিত। বেনামাযীদের হাশর উপরোক্ত চার ব্যক্তির সাথে হওয়ার রহস্য হচ্ছে, নামায তরককারী সাধারণতঃ চার প্রকার হয়ে থাকে ।
এক : শাসন ক্ষমতার নেশায় যারা ক্ষমতার গর্বে নামাযে অবহেলা করে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী ফিরআউনের সাথে তাদের হাশর হবে
দুই : ধন-সম্পদের গর্বের কারণে যারা নামায তরক করে,সম্পদ লোভী নাফরমান কারুনের সাথে তাদের হাশর হবে।
তিন : সরকারী কর্মচারী ও চাকুরীর কারণে যারা নামায তরক করে, হামানের সাথে তাদের হাশর হবে। কেননা, চাকরীর মোহের কারণেই সে মহান আল্লাহর নাফরমান হয়েছিল।
চার : ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে যারা নামাযে অবহেলা করবে, মক্কার ধূর্ত ব্যবসায়ী উবাই ইবনে খলফের সাথে তাদের হাশর হবে।
এছাড়াও বহু মা বাচ্চার কান্নাকাটি, বাচ্চার নাওয়ানো, খাওয়ানো ইত্যাদি তুচ্ছ ওজরের কারণে নামায কাযা করে ফেলে। অথচ হুশে থাকা অবস্থায় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফরয নামায তরক করার অনুমতি নেই ।
নামাযের প্রতি যত্নবান হওয়া ফরয
শরীয়তের হুকুম মতে অসুস্থতার কারণে দাঁড়াতে না পারলে বসে এবং বসে না পারলে শুয়ে নামায আদায় করবে। তবুও নামায ছাড়বে না। তদ্রূপ ৪৮ মাইল বা তার অধিক দূরত্বের কোন সফরে গেলে চার রাকাতের স্থলে দু' রাকাত নামায পড়বে।
গাড়ী ধরা বা অন্যান্য তাড়াহুড়ার কারণে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ছাড়া যায়। কিন্তু বিতির নামায সফরেও ওয়াজিব। সুতরাং তা অবশ্যই আদায় করতে হবে। অনেককে সামান্য অজুহাতেও সফরে নামায ছেড়ে দিতে দেখা যায়। এমনকি অনেক নামাযী মহিলাও পর্দার ব্যাঘাত ঘটার অজুহাতে সফরে নামায ছেড়ে দেয়। বোরকা পরে পুরুষদের মাঝে উঠা-বসা, চলা-ফিরা সব কাজই চলে শুধু নামাযে পর্দা নষ্ট হয়, এটা শয়তানী ওয়াসওয়াসা বৈ কিছুই নয় ।
বিয়ে শাদীর অনুষ্ঠানেও নামাযের প্রতি অবহেলা দেখা যায়। বিশেষ করে সাজ-সজ্জা নষ্ট হওয়ার ভয়ে নামায ছেড়ে দেয়া হয়। অনেকে লজ্জাবোধ' করে নামায ছেড়ে দেয়। বলাবাহুল্য যে, এসব হচ্ছে মহান আল্লাহভীতির অভাব এবং ঈমান দুর্বল হওয়ার কারণ ।
দ্বিতীয় দায়িত্ব
আলোচ্য হাদীসে নারী জাতির প্রতি দ্বিতীয় উপদেশ হচ্ছে রমজানের রোজার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া। আগে মনে করা হতো যে, নামাযে অলসতা থাকালেও রোজার ব্যাপারে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশ অগ্রসর। কিন্তু স্কুল-কলেজের ধর্মহীন শিক্ষার বিষফল এমন হয়েছে যে, আধুনিক নারীরা নামায রোযা নিয়ে বিদ্রূপ উপহাস করতেও দ্বিধাবোধ করে না। আধুনিক বোনদের প্রতি দরদপূর্ণ আবেদন, এ সাজ-সজ্জা ও ফ্যাশন পূজা, এ বল্গাহীন ছুটে চলা, এ ভোগ উপভোগ সবই ক্ষণস্থায়ী। একদিন আমাদের এ জগৎ ছেড়ে চলে যেতে হবে। সুতরাং মৃত্যুর পরে যে আখেরাতের অনন্তকাল শুরু হবে সে বিষয়ের চিন্তা করা উচিত।
তৃতীয় দায়িত্ব
আলোচ্য হাদীসে নারীদের প্রতি তৃতীয় উপদেশ হচ্ছে সতীত্ব রক্ষা করে চলা । বলাবাহুল্য পর-পুরুষ থেকে দূরে থাকা, পর্দার প্রতি যত্নবান হওয়া, প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে শালীনতা বজায় রেখে কোন মাহরামের সাথে বের হওয়া এবং নজর নীচু রাখার মাধ্যমেই নারীর ইজ্জত আবরু রক্ষা পেতে পারে।
কিন্তু আফসোস, পর্দা ও সতীত্বের ধারণা মুসলিম নারীর অন্তর থেকে যুগের হাওয়ায় এখন লোপ পেতে চলেছে! প্রগতিবাদের নামে খোদ নারীরাই আজ পর্দা ও সতীত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আওয়াজ তুলছে। আরও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, পুরুষরাও আজ তাদের স্ত্রী-কন্যা ও বোনদের বেপর্দা ভাবে চলাফেরায় ছেড়ে দিতে লজ্জাবোধ করছে না। এসবই ইসলামের শত্রু ইহুদী নাসারাদের কুচক্রের ফল।
চতুর্থ দায়িত্ব
স্বামীর আনুগত্য করা। ইসলামী শরীয়ত নরকে নারীর উপর প্রাধান্য দিয়ে স্ত্রীর উপর স্বামীর আনুগত্য করা ফরয করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে :
অর্থাৎ পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক। কেননা আল্লাহ তায়ালা একে অন্যের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
বলাবাহুল্য যে, স্বামী-স্ত্রীর সংসার উভয়ের ভালবাসা, সম্প্রীতি, সমঝোতার মাধ্যমেই সুখী এবং সুন্দর হয়। কিন্তু দুর্লভ ব্যতিক্রম বাদ দিলে পুরুষকে যেহেতু মহান আল্লাহ বুদ্ধি-বিবেচনা ও শক্তি চেতনা অধিক দান করেছেন, সেহেতু পুরুষকে তিনি নারীর অভিভাবকত্ব দান করেছেন। আর অভিভাবকের আনুগত্য ছাড়া সংসারে অচলতা দেখা দেয়। সেহেতু মহিলাদের উপর স্বামীর আনুগত্য আবশ্যক করা হয়েছে। কিন্তু পাশ্চাত্য প্রভাবিত আজকের আধুনিক মুসলিম সমাজ ইসলামী শরীয়তের এ স্বভাব বিধানকে অমান্য করে নারী স্বাধীনতার নামে ইসলামী পারিবারিক শাসন কাঠামো প্রায় তছনছ করে ফেলেছে এবং তার অবশ্যম্ভাবী ফলও ভোগ করছে।
মোটকথা, যে স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে, রমযান মাসে রোযা রাখবে,স্বীয় সতীত্বের হেফাযত করবে, আর স্বামীর আনুগত্য করবে। তার সম্পর্কে মহান আল্লাহর পেয়ারা হাবীবের সুসংবাদ বাণী এই যে, সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। মহান আল্লাহ সকলকে ইসলামী বিধান মত চলার তাওফিক দান করুন। আমীন I