তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলত
05:57:34 12/03/2023
তাহাজ্জুদ নামাযের ফযীলত: হযরত আবু হুরায়রাহ [রাঃ] হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন, “মহান আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে রহম করুন, যে রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে তাহাজ্জুদ পড়ায়। আর ঘুমের কারণে উঠতে না চাইলে তার চেহারায় পানির ছিটা দেয়। ঐ স্ত্রীকে মহান আল্লাহ রহম করুন, যে রাত্রে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং স্বামীকে জাগিয়ে তাহাজ্জুদ পড়ায় আর সে উঠতে না চাইলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়।” [আবু দাউদ ও নাসায়ী]
তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের জন্য স্বয়ং আল্লাহর হাবীব দু'আ করেছেন, যা আল্লাহ পাক অবশ্যই কবুল করবেন। সামান্য একটু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এ দু'আর ভাগী হতে পারি। তাছাড়া অভ্যাস হয়ে গেলে সামান্য কষ্টটুকুও আর থাকে না। অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন, “তোমরা রাত্রের [তাহাজ্জুদের] নামায পড়। কেননা, তোমাদের পূর্ব উম্মতের নেক বান্দারাও এ নামায পড়তেন। আর এ নামায তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় এবং গুনাহের জন্য কাফফারা স্বরূপ এবং যাবতীয় গুনাহ থেকে প্রতিবন্ধক।” [তিরমিযি]
কোন্ দু'আ অধিক মকবুল? এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ [সাঃ] ইরশাদ করেছেন, “রাত্রের শেষ অর্ধেকের দু'আ এবং ফরয নামাযের পরের দু'আ’ আল্লাহর নিকট অধিক গ্রহণীয়। [তিরমিযি]
অন্য এক হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা [রাঃ] বর্ণিত, “প্রতি রাত্রে শেষ তৃতীয়াংশে মহান আল্লাহ ডেকে বলেন, আছে কোন প্রার্থনাকারী, তাহলে তার প্রার্থনা আমি কবুল করবো, আছে কোন ক্ষমা প্রার্থী, তাহলে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব । যিনি সব কিছুর মালিক, আর তিনি জুলুমকারী নন। তাঁকে করয দানকারী কেউ আছে কি? তার পথে যা কিছু দান করবে তিনি তা করয হিসেবে ধরে নিবেন, অথচ এ সম্পদ তাঁরই দেয়া। অতঃপর তিনি কমপক্ষে এর দশ গুণ প্রতিদান দিবেন। আর যাকে ইচ্ছা আরও অধিক প্রতিদান দিবেন । [মুসলিম শরীফ]
হযরত আবু মালেক আশআরী [রাঃ] হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] ইরশাদ করেছেন, “জান্নাতে এমন কিছু প্রাসাদ রয়েছে যা এত স্বচ্ছ যে, বাহিরের অংশ ভিতর থেকে এবং ভিতরের অংশ বাহির থেকে দেখা যায়। মহান আল্লাহ এগুলো তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন, যারা নম্রভাবে কথা বলে, আর অভাবীদের খাদ্য দান করে। আর রাত্রে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তারা তাহাজ্জুদের নামায পড়ে।” [মিশকাত শরীফ]
রাসূলুল্লাহ [সাঃ] এক রাত্রে জাগ্রত হয়ে বললেন, “তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য অন্তপুরবাসিনীদেরকে জাগিয়ে দিবে? আপন স্ত্রীদের জাগ্রত করার উদ্দেশ্যেই তিনি একথা বলে ছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, পৃথিবীর বহু বস্ত্রাবৃত ব্যক্তিগণ আখেরাতে বিবস্ত্রা হয়ে যাবে।” [বুখারী শরীফ]
স্বভাবতঃই নারীরা সাজ পোশাকের প্রতি দুর্বল হয়ে থাকে। সে চিন্তায় আরেখরাতের ফিকির করার তাদের সুযোগ হয়ে উঠে না। যার ফলে তাদেরকে আখেরাতের অতুলনীয় লেবাস থেকে বঞ্চিতাহতে হবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “কিয়ামতের দিন সমস্ত নারী-পুরুষ উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে। অতঃপর জান্নাতীদেরকে এমন সুন্দর রেশমী বস্ত্র পরানো হবে যে, একজন জান্নাতী নারীর মাথার ওড়না দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম হবে।” [বুখারী শরীফ]
অপরপক্ষে জাহান্নামীদের কাপড় হবে আগুনের। সূরায়ে হজ্জে বলা হয়েছে— “আর যারা কুফরি করছে তাদের জন্য কিয়ামতের দিন আগুনের পোষাক পড়ানো হবে। [অর্থাৎ আগুন তাদেরকে কাপড়ের মত লেপ্টে থাকবে]।”
আসুন; জাহান্নামের এ কঠিন আযাবের পোশাক থেকে মহান আল্লাহর দরবারে সকলে সাহায্য প্রার্থনা করি। সত্যিই চিন্তার বিষয় যে, একদিকে আগুনের ভয়ংকর পোশাক অন্যদিকে জান্নাতী অকল্পনীয় আরামদায়ক পোশাক। আরো কত অসংখ্য অনন্ত নেয়ামত। অথচ সেগুলোর প্রতি চরম উদাসীন হয়ে ক্ষণস্থায়ী জীবনের সাজ পোশাকে মা-বোনেরা এমনই মত্ত যে নফল তো দূরের কথা, ফরয নামাযেরও খবর থাকে না। আলোচ্য হাদীসে শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে শেষ রাত্রের বরকতময় সময়ে তাহাজ্জুদের নামাযে মশগুল হওয়া, রাহমানুর রাহীমের দরবারে দুয়া করা ও রোনাজারি করা মুসলিম নর-নারীদের একান্ত কর্তব্য ।
স্বামী বা স্ত্রী যে আগে উঠবে সে যেন অপরকে প্রয়োজনে চেহারায় পানি ছিটিয়ে দিয়ে জাগিয়ে তুলবে। একে অপরকে জাগানোর সময় বিরক্তিভাব প্রকাশ করা উচিত নয় । যদি স্বামী একান্তই উঠতে না চায় তবে নিজেই উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করবে। তবে সারারাত্র নফল নামাযে দাঁড়িয়ে থাকবে না। বরং স্বামীর হকও পুরা করবে এবং প্রয়োজন মত ঘুমিয়েও নিবে। সে সাথে খুব লক্ষ্য রাখবে যাতে কোন অবস্থাতেই ফজরের নামায কাযা না হয়ে যায়। প্রয়োজনে ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখবে। তাহাজ্জুদের প্রতি রাকাতে বিশেষ সংখ্যায় সূরা ইখলাস পড়তে হবে এমন কথা শরীয়তের কোথাও নেই । বরং সাধারণ নামাযের মতই যে কোন সূরা দ্বারা পড়া যায়।
মাসআলা : তাহাজ্জুদের সময় উঠতে পারার ভরসা থাকলে বিতিরের নামায ইশার সাথে না পড়ে তাহাজ্জুদের পরে পড়া উত্তম। আর সে ভরসা না থাকলে ইশার পরেই বিতরের নামায পড়ে নিবে।