কসমেটিকের ব্যবহার ও ত্বক পরিচর্যা
আমাদের শরীরের ২ বর্গমিটার জুড়ে আছে ত্বক। সে কারণেই এই ত্বককে বলা হয় শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ । নিঃসন্দেহে এই ত্বক আমাদের দেহের একটি অন্যতম ইন্দ্রিয়। একে বাদ দিয়ে দেহকে চিন্তাই করা যায় না। বিশেষ করে রূপসী রমণীদের বেলায় তো বটেই। একটি ছোট দাগ দেখা দিলে সেটা তুলে ফেলার জন্য তাদের কি কম ভাবনা? তাছাড়া তাদের একটু সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কত ধরনের কসমেটিক বা প্রসাধন চর্চা। এই প্রসাধন বা কসমেটিক একটি প্রাচীন গ্রীক শব্দ। এসেছে গ্রীক ভাষা ‘কসমস’ থেকে। আবার ‘কসমস শব্দটির অর্থ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রাচীন যুগে কৃত্রিম প্রসাধনী ছিল না, তাই প্রসাধনী বলতেই বোঝাত প্রাকৃতিক প্রসাধনী বা কসমেটিক। নারী জীবনে কসমেটিকের গুরুত্ব অপরিসীম। তা না হলে পৃথিবী জুড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিশ্চয়ই এর পেছনে ব্যয় করা হত না।
শুধু আমেরিকায় ১৯৯৩ সালে কসমেটিকস আর টয়লেট্রিজের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলার আর চুল সংক্রান্ত কসমেটিকের পেছনে ব্যয় ৭ বিলিয়ন ডলার, চর্ম সংক্রান্ত কসমেটিকের পেছনে ব্যয় ৪.৬ বিলিয়ন ডলার। বাকি ৬ বিলিয়ন ব্যয় হয়েছে নারী আর পুরুষের সুগন্ধীযুক্ত সামগ্রীর পেছনে। তবে এই কসমেটিক ব্যবহারের অপকারিতাও কিন্তু কম নয়। প্রায় দেখা যায়। এই সমস্ত সামগ্রী ব্যবহারের পর ছুটে আসতে হচ্ছে চর্মব্যাধি বিশেষজ্ঞদের কাছে, কারণ সে কিনা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে বসেছে কনট্যাক্ট ডামাটাইরিসে। কসমেটিক শুধু ত্বকের জন্যই নয়, কসমেটিকের প্রয়োগ হয় ত্বক, চুল আর নখের ওপর।
বাজারে কিন্তু স্কিন কেয়ার কসমেটিকসের অন্ত নেই। এ কসমেটিক আবার গুণগতভাবে ভাগ হয়েছে বেশ ক’ভাগে; যেমন- ক্লিনজার, টোনার, এক্সফেলিয়েন্টস, ময়শ্চারাইজার, এন্টিপার্সপিরেল এবং ডিওডারেন্টস ইত্যাদি। তবে এগুলোর যে কোনোটাই হোক না কেন সেটা যদি মুখে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয় তবে আদর্শগতভাবে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে সেটা যেন এলার্জি তৈরি না করে, কমিডোন কিংবা ব্রণ হতে সহায়তা না করে। এ ব্যপারে কিন্তু কসমেটিক, কেমিস্ট আর চর্ম বিশেষজ্ঞরা যৌথভাবে কঠোর প্রচেষ্টা করেও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রোধে সম্পূর্ণ সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়নি।
ক্লিনজার
সম্ভবত ক্লিন থেকে ক্লিনজার কথাটার সৃষ্টি। যার উদ্দেশ্য শরীরের ময়লা, ব্যাকটেরিয়া, সেবাম এবং লেগে থাকা কসমেটিকের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করা। মুখে ব্যবহার করার মত প্রচুর ক্লিনজার সামগ্রী বাজারে আছে। কিছু আছ সলিড ক্রীমের আকারে, কিছু আছে হিমায়িত ক্লিনজার হিসেবে, অর্থাৎ লোশন হিসেবে। কোন ধরনের ক্লিনজার আপনি ব্যবহার করবেন তা নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজন হবে আপনার ত্বকের ধরন পরীক্ষা করিয়ে দেখা অর্থাৎ আপনার ত্বক তৈলাক্ত কিংবা শুকনা অথবা মিশ্র কিংবা স্বাভাবিক তার ওপর নির্ভর করে আপনার ত্বকের জন্য ক্লিনজার বেছে নিতে হবে। এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত হতে না পারলে চর্মব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
টোনার
ব্যবহারের দিক দিয়ে ক্লিনজারের পরই আসে টোনার। তরল এই টোনারের কাজ হলো সাবানের অবশিষ্টাংশসহ মুখে থেকে যাওয়া তৈলাক্ত পদার্থ কিংবা ময়লা, যা ক্লিনজার ব্যবহারের পরও রয়ে গেছে, সেগুলোকে দূর করে মুখের সতেজ ভাব ফুটিয়ে তোলা। এছাড়া কিছু কিছু টোনার আছে যা ব্রণ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
ময়শ্চারাইজার
ময়শ্চারাইজার ত্বকের সর্ববাহিরের আবরণের আর্দ্রতা রক্ষায় সাহায্য করে। এই আর্দ্রতা রক্ষা করা না গেলে ত্বক আর্দ্রতা হারাতে থাকে এবং পরিমিত বয়সের আগেই ত্বকে বয়সের ছাপ এসে দেখা দেয় এবং ত্বকের কোমলতা ও মসৃণতা ক্রমেই হারিয়ে যায় ।
ত্বক পরিচর্যার কয়েকটি পরামর্শ
১. অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে।
২. রৌদ্রে গেলে ছাতা ব্যবহার করবেন অথবা ফটোপ্লেক্স জাতীয় সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। ৩. অতিরিক্ত পরিমাণ সাবান ব্যবহার করা কিংবা একদমই না করা- এ কোনোটাই উচিত নয়। একদম ব্যবহার না করলে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ হতে পারে। এমন সাবান ব্যবহার করা উচিত যেন অতিরিক্ত ক্ষার তাতে না থাকে। বেবি সোপ বা গ্লিসারিন সোপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. অতিরিক্ত পরিমাণ অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বক মোটা ও খসখসে হয়ে যায়।
৫. ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় দৈনিক প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া দরকার। অন্তত ৯-১০ গ্লাস পানি
খাওয়া উচিত, নয়তো ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বক শুকিয়ে গেলে ত্বক পানি আটকে রাখতে পারে না। তাই সে ক্ষেত্রে পানিতে সামান্য পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে। লবণ ত্বকে পানি আটকে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া ভিটামিনযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত
৬. ত্বকের টানটান ভাবটাকে বজায় রাখতে হলে নিয়মিত ত্বক ম্যাসাজ করা উচিত। নিয়মিত ও বিজ্ঞানসম্মত ম্যাসাজের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তরতাজা রাখা সম্ভব। প্রতিদিন অন্তত এই ম্যাসাজ ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত করা উচিত।
৭. অনেকের আবার তেল ব্যবহার করার অভ্যাস আছে। মনে রাখবেন তেল মাখবেন শীতকালে, গরম কালে নয়। কারণ গরম কালে মাখলে ঘামাছি হবার সম্ভাবনা থাকে। তেল যারা মাখেন তারা তেল মাখবেন গোসলের পরে আগে নয়।