বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা

বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা : অবিবাহিতদের মনে বিয়ে শব্দটা শুনলে যেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হয় ঠিক তেমনি মনে জাগে শঙ্কা। বিয়ে এখন আর নিয়তি নির্ধারিত নয়। সংসার ধর্মের সব বিধিনিয়ম পেরিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক সতর্কবাণীর মুখোমুখি হয়েছে বিয়ে। বিবাহ, প্রজনন, সন্তান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নীরোগ ও সুস্থ শিশুর জন্ম লাভের জন্য প্রয়োজন যথার্থ চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাহায্য ও সতর্কতা।

আগের দিনে বিবাহিত জীবনে প্রবেশের মুহূর্তে সংসারে কীভাবে মানিয়ে নিতে হয় সে সম্পর্কে উপদেশ দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত সতর্কতামূলক কার্যাবলী ।

বিয়ের পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে কত তথ্যই না জানতে হয়। কিন্তু পাত্র-পাত্রীর রক্তের গ্রুপ জানা প্রয়োজন- এ কথা ভেবেছেন কখনো? অথচ বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ জানা বিশেষ জরুরি। সকল মানুষের রক্তের প্রকৃতি এক নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানুষের রক্তের গ্রুপকে চারটি ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো A, B, AB এবং O এদের মাঝে আবার রেসাস ফ্যাক্টর বা Rh ফ্যাক্টর পজেটিভ বা নেগেটিভ দুই রকম আছে। অর্থাৎ কেউ Rh পজেটিভ আবার কেউ Rh নেগেটিভ। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই রক্তের গ্রুপ যদি Rh পজেটিভ বা Rh নেগেটিভ হয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আবার স্বামীর Rনেগেটিভ হলেও কোনো সমস্যা হবে না।

কিন্তু স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ Rh নেগেটিভ এবং স্বামীর Rh পজেটিভ হলে ভাবনার কারণ রয়েছে । কারণ Rh নেগেটিভ নারীর গর্ভস্থ সন্তান Rh পজেটিভ হলে মা ও শিশু দুজনেরই বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ শিশু গর্ভে থাকার সময় Rh পজেটিভ রক্ত কণিকা মায়ের শরীরে প্রবেশ করে। এতে মায়ের শরীরে ইমিউন অ্যান্টিবডি তৈরি হয় আর এর ক্ষতিকর প্রভাব গর্ভস্থ শিশুর ওপর পড়ে। শিশুর রক্তকণিকা অস্বাভাবিকভাবে ভাঙতে থাকে ও বিলিরুবিন বেড়ে যায়।

এত শিশুর মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । Rh নেগেটিভ মায়ের শিশু Rh পজেটিভ হলে অবশ্যই শিশুর জন্মের ৭২ ঘণ্টার মাঝে প্রসূতি মাকে অ্যান্টিবডি ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন দিতে হবে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া রোগ সম্পর্কে আগেই জানা সম্ভব। থ্যালাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়া

জেনেটিক রোগ। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রফোরোসিস করে থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা জানা যায়। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে পরবর্তীতে তাদের সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়। দুজনের একজন থ্যালাসেমিয়াতে আক্রান্ত বা বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ। বাবা-মা দুজনের একজন রোগী ও অন্যজন সুস্থ হলেও তাদের প্রতিটি সন্তানের এ রোগের বাহক হবার আশঙ্কা রয়েছে।

আর হিমোফিলিয়া রোগের ব্যাপারটা এরকম যে, নারীরা শুধুমাত্র এ রোগের বাহক এবং পুরুষরাই আক্রান্ত হন। আক্রান্ত পুরুষ যখন বিয়ে করবে তখন তার কন্যা সন্তানের বাহক হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বিয়ের আগে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের জন্য রক্ত পরীক্ষাও প্রয়োজন। কোনো ছেলে বা মেয়ে যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের হেলদি ক্যারিয়ার বা বাহক হয় এবং লিভার ফাংশনে কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে তাদের বিয়ে হলে অসুবিধা নেই। তবে পাত্র- পাত্রী যারই রোগ থাকুক অপরকে জানিয়ে রাখা উচিত। আর যাকে বিয়ে করবে তাকে অবশ্যই বিয়ের আগে ভ্যাকসিন নিতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের পর যখন সন্তান হবে, সেই সন্তানকে জন্মের সাথে সাথে ভ্যাকসিন ও ইমিউনোগ্লোবিন ইনজেকশন দিতে হবে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস রক্তে পাওয়া গেলে তা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করা উচিত নয়। সি ভাইরাসের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি।

বংশগত কয়েকটি রোগ পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রাকবিবাহ ও বিবাহ পরবর্তীকালে ভাই সতর্কতা প্রয়োজন। বংশগতভাবে প্রতিবন্ধী বা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু জন্মের ইতিহাস থাকলে সাবধান হতে হবে। এক্ষেত্রে একই পরিবারের ছেলে মেয়ের মধ্যে বিয়ে না হওয়া ভালো। মানুষের শরীরের ৪৪টি দেহ ক্রোমোজোম ও ২টি সেক্স ক্রোমোজোম XX বা XY বিশ্লেষণ করে বংশগত রোগের প্রকৃত কারণ জানা যায়। মাতৃগর্ভে সন্তানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে CVS Ultrasound করে জানা যেতে পারে অনাগত সন্তান স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক।

মানুষের যে কোনো অসুখ থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অসুখের জন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা। ডায়াবেটিস, হাঁপানি ইত্যাদি সমস্যা থাকলেও বিয়ের আগে অপর পক্ষকে জানানো ভালো। যৌন রোগে আক্রান্ত হলেও প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা। এক্ষেত্রে সুস্থ না হয়ে বিয়ে করা উচিত নয় ।

আধুনিক ও সুস্থ মন মানসিকতা নিয়ে যে কোনো অসুখের মোকাবিলা করতে হবে। অসুখের কথা না জানিয়ে বিয়ে করলে পরবর্তীতে সুখী হওয়া সম্ভব হবে না। তাই কোনো লুকোচুরি নয় স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন সবকিছু।

মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার উপায়

যকৃত রোগের চিকিৎসা

আমাদের ইউটিউব ইউটিব চ্যানেল

Leave a Comment