আদম (আ) কি নবী ও রসূল ছিলেন? - Adam Nabir Ghotona
13:54:10 06/12/2024
আদম (আ) কি নবী ও রসূল ছিলেন?: ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী নবী সেই ব্যক্তিকে ঘোষণা করা হয় যাকে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের পথ প্রদর্শনের জন্য মনোনীত করেন এবং যিনি –আল্লাহর সাথে প্রত্যক্ষ কথাবার্তা বলেন। আর রসূল সেই নবীকে বলা হয় যার কাছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নতুন শরীয়ত (জীবন ব্যবস্থা) এবং নতুন আসমানী কিতাব (ঐশ্বীগ্রন্থ) পাঠানো হয়।
যেহেতু হযরত আদম (আ) মানব জাতির পিতা, তাই আপনা আপনি এ প্রশ্ন উঠতে পারে, তিনি যেমন তার বংশের ইহলৌকিক মঙ্গল ও সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শক ও অভিবাভক ছিলেন তেমনি কি তাদের পারলৌকিক মঙ্গল ও সাফল্য লাভেল ক্ষেত্রে নবীও ছিলেন?
অর্থাৎঃ আমাদের কতক আত্মসমর্পণকারী এবং কতক সীমা লঙ্ঘনকারী (সূরা ঃজ্বিন, আয়াতঃ১৪) সে ছিল জিনদের একজন। সে তাঁর প্রভুর নির্দেশ অমান্য করল।
এই সমস্ত আয়াত দ্বারা এটাও বুঝা যাচ্ছে যে, শয়তান ছিল জিনেরই বংশধর এবং স্বয়ং ইবলীস (শয়তান) আল্লাহর সামনে স্বীকার করেছে তার সৃষ্টি নার (আগুন) থেকে হয়েছে।উপরোক্ত আয়াতসমূহ ছাড়াও কুরআন মজীদের ৩১টি আয়াতে মোট ৩২ বার জিন, জান ও জিন্নাহ শব্দের বর্ণনা করা হয়েছে।
মোট কথা আল্লাহর কিতাব এবং রসূলের বানী আমাদের জ্ঞাত করেছে মালায়েকা এবং জিন যদিও আমার দেখতে পাই না, কিন্তু ওরা নিঃসন্দেহে একটি স্বতন্ত্র সৃষ্টি। আর একথা স্বীকার্য দেখার মধ্যে ভুল হওয়া সম্ভব এবং বার বার তা হয়েও থাকে। কিন্তু অহীয়ে এলাহী এবং নবী (স) প্রদত্ত খবরের মধ্যে ভুলের কোন সুযোগ নেই। অতএব আমাদের ঈমান ও ওরা আল্লাহর এক একটি স্বতন্ত্র সৃষ্টি। তাছাড়া সাধারণ বিবেক বুদ্ধিও এদের পৃথক সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারটিকে অসম্ভব মনে করে না।
অতএব যে জিনিসটি সাধারণ বিবেক বুদ্ধির দৃষ্টিতে অসম্ভব নয় এবং অহীয়ে এলাহী এ যার অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয় তাকে অস্বীকার করা ইলম (জ্ঞান) ও হাকীকত (প্রকৃত সত্য) অস্বীকার করারই গণ্য।
বাকি থাকলো আমাদের স্বচক্ষে দেখা ও অনুভব করার ব্যাপারটি। কিন্তু আমরা কোন ব্যক্তিকেই না দেখলেই যে তার অস্তিত্ব অস্বীকার করে বসবো-এটাও তো কোন যুক্তিসঙ্গত কথা নয়। কেননা অত্যাদূনিক দূরবীন এবং এ জাতীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে মানব হাজার হাজার বছর পর্যন্ত এমন অনেক অস্তিত্বশীল জিনিস দেখতে পারেনি বা অনুভব করতে পারেনি যেসব আজ অনায়াসে দেখা যাচ্ছে বা অনুভব করা যাচ্ছে।
তাহলে হাজার হাজার বছর পূর্বে যে সব ব্যক্তি এসব জিনিসের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিল তারা কি প্রকৃত ইলম ও বুদ্ধি সম্মত কাজ করেছিল, নাকি অজ্ঞানতা ও বুদ্ধি হীনতার কারণে তারা এ ব্যাপারে ভুলের স্বীকারে পরিণত হয়েছিল? এভাবে আমরা আজো বিদ্যুৎ চুম্বক আলো ইত্যাদি হাকীকত (মূলতত্ব) সর্ম্পকে পুরোপুরি ওয়াকেফহাল হতে পারিনি বরং সাংকেতিকভাবে ও ইশারা ইংগিত এসবের পরিচয় লাভ করতে পেরেছি মাত্র। অতএব জড়বাদী ও নাস্তিক কর্তৃক মালায়েকা ও জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার, তার অজ্ঞানতা ও বুদ্ধিহীনতারই পরিচায়ক। তাছাড়া ইলম দু‘ভাবে অর্জিত হয়।
একঃ বিভিন্ন বিদ্যা অধ্যায়নের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে চেষ্টা ও শ্রমের প্রয়োজন।দুইঃ আল্লাহর অনুগ্রহের মাধ্যমে। আর এর সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে অহীয়ে এলাহী। অতএব আমরা যদি ইলম ও বিদ্যার মাধ্যমে কোন বস্তু না জানতে পারি অথচ সাধারণ বুদ্ধি সে বস্তুর অস্তিত্বকে অসম্ভব বলে মনে করে না এবং অহীয়ে এলাহীও। তার অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে তাহলে প্রতিটি বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানবের কর্তব্য হবে নিজের জ্ঞানে পশ্চাৎপদতা সত্ত্বেও সে বস্তুর অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেয়া। হ্যাঁ, যদিও সে এটাকে অহীয়ে এলাহীর সংবাদ বলে অস্বীকার করে কিংবা অহীয়ে এলাহীকেই আগাগোড়া অস্বীকার করে বসে তাহলে এ সম্পর্কে ঈমান আনার পূর্বে তার উচিত হবে, ঐ সব দলীল প্রমাণ ভালভাবে তলিয়ে দেখা যা এ প্রসঙ্গে ইঙ্গিত হয়েছে এবং যাতে পরিষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে এটা অহীয়ে এলাহি তথা আল্লাহর বাণী ছাড়া কিছু নয়।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর জীবনী