আদম (আ) এর প্রতি ফজর নামাজ প্রবর্তন - Adam Nabir Namaj
13:57:00 06/12/2024
আদম (আ) এর প্রতি ফজর নামাজ প্রবর্তন: হযরত আদম (আ) ও হযরত হাওয়া যখন পুথিবীতে প্রেরণ হয়েছিলেন তখন সমগ্র দুনিয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। হযরত আদম (আ) ও হযরত হাওয়া (আ) তিনশত বছরকাল অন্ধকারের মধ্যেই অতিবাহিত করেছিলেন। তারপর যেদিন ভোরে হযরত আদম (আ) এর দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হল এবং আল্লাহ পাক তার গুনাহ ক্ষমা করলেন, সাথে সাথে হযরত আদম (আ) কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আল্লাহর দরবারে দুটি সিজদাহ দিলেন। ঐ সিজদাহ দুটি পরবর্তকালে ফজরের দুরাকাত ফরয নামাযে পরিণত হল। এর আগে হযরত আদম (আ) এর প্রতি কোন নামায আদায়ের হুকুম ছিল না, সুতরাং তিনি ইতোপূর্বে কোন নামায আদায় করেননি, কিন্তু ঐ দিনের পর হতে তার প্রতি ফজরের ওয়াক্তে আদায় করার জন্য দুরাকাত নামায ফরজ হয় এবং তিনি তা যথারীতি আদায় করতে থাকেন।
এ ঘটনা সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার
এখানে আরো এমন কিছু বিষয়ের উপর আলোচনা করা প্রয়োজন যা এ ঘটনার ব্যাখা ও বিশ্লেষণে সহায়ক হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। আদম ও হাওয়া আরবী নাম, না অনারব নাম? কোন প্রাসংগিকতায় এই নাম রাখা হয়েছে, নাকি শুধু নামের জন্যই এ নাম?
প্রথম প্রশ্ন সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফিয ইবেন হাজার মক্কীর মতামত হলো, এসব সুরাইয়ানী নাম এবং বাইবেলে আলিফ এবং দালকে দীর্ঘ করে আদম (অর্থাৎ আদাম) গঠিত হয়। আল্লামা জাওহারী এবং জাওয়লিকী (রা)-এর অভিমত হলো, এসব আরবী নাম। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে সা‘লাবীর অভিমত হলো, ইবরাণী ভাষায় মৃত্তিকাকে আদম বলা হয়। যেহেতু মৃত্তিকা থেকে তার সৃষ্টি তাই তার নাম রাখা হয়েছে আদম বা আদাম। কারো কারো ধারণা আদম উদমাহ ধাতু থেকে নির্গত হয়েছে।
কেননা তাকে আদীমুল আরদ অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কোন কোন বিজ্ঞজনের মতে আদম আদামাত (অর্থ কালাত্বাত-মিশ্রিত হয়েছে) থেকে নির্গত হয়েছে। যেহেতু পানি ও মৃত্তিকা একত্রে মিশ্রিত করে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল সে অনুযায়ী তার নাম রাখা হয়েছে আদম। এভাবে হাওয়া নাম রাখা হয়েছে এজন্য সে প্রত্যেক ইনসানে হাই (জীবন্ত মানব)-এর মা। হাওয়া হচ্ছে হাই এর মুবালাগা রূপ।
যাহোক নাম ও অর্থের এ পারস্পরিক সন্বন্ধ এমন, উল্লেখিত সব কারণকে একই সাথে সঠিক বলা যেতে পারে, আবার কোন একটি কারণকে অপর কারণের উপর প্রাধান্যও দেয়া যেতে পারে। কেননা এই দরজা অনেক প্রশস্ত।
আল্লাহ তাআ‘লা সিজদার যে নির্দেশ দিয়াছিলেন তা তো ফেরেশতাদের উদ্দেশ্য করে। অতএব ইবলীস যদি ফেরেশতা জাতির অন্তর্ভুক্ত না হয় তবে কেন তার উপর আল্লাহর শাস্তি পতিত হলো? কেনই বা তাকে অবাধ্যতার অভিযোগে অপরাধী সাব্যস্ত করা হলো? এর উত্তর এই ইবলীস নিঃসন্দেহে ফেরেশতা জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল না। কেননা পবিত্র কুরআনে পরিষ্কার বলা হয়েছে, সে ছিল জিনদের একজন , সে তার প্রভুর নির্দেশ অমান্য করলো। (সূরাঃকাহফ, আয়াতঃ ৫০)
কিন্তু আল্লাহ তাআ‘লা যখন সিজদার নির্দেশ দেন তখন সে ঐ মাহফিলেই উপস্থিত ছিল। এক অজ্ঞাত কাল পর্যন্ত আল্লাহর পবিত্রতা ও একত্বতা বর্ণনায় ফেরেশতার সাথে অবস্থান করার ফলে সেও ফেরেশতা সম্বোধনে সম্বোধিত হত এবং নিজেও নিজের ক্ষেত্রে অনুরূপ ধারণা করত।এ কারণেই আল্লাহ তাআলা যখন তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি সিজদা কর নি কেন? তখন সে এরূপ উত্তর দেয়নি, আমি ফেরেশতা নই. অতএব আমি এ নির্দেশেরও উদ্দিষ্ট নই, সিজদা করবো বরং সে গর্ব করে বলে উঠল আমি আদম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। তাই সিজদা থেকে বিরত রয়েছি।
এ উত্তর সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত। অন্যথায় এই মর্মে একটি দূর্বল মতামত এটাই আছে এক প্রকার ফেরেশতাকেও জ্বিন বলা হয়। আর ইবলীস ছিল ওদেরই একজন। কিন্তু এই মতামতের সমর্থন না কুরআন থেকে পাওয়া যায়, আর না সহীহ হাদীস থেকে।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর জীবনী