ইমাম বুখারী রহ. এর জীবনী - Imam Bukhari. Biography of
15:27:09 12/14/2023
ইমাম বুখারী রহ. এর জীবনী
নাম : মুহাম্মদ।
উপনাম : আবু আব্দুল্লাহ।
উপাধি : আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদীস, নাশিরুল মাওয়ারিসীল মুহাম্মদীয়া।
পিতার নাম : ইসমাঈল।
পূর্ণ নাম : আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী।
জন্মস্থান বুখারার দিকে নিসবত করে ইমাম বুখারী নামেই তিনি বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
জন্ম : ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৯৪ হিজরীর ১৩ শাওয়াল মুতাবেক ১৯ জুলাই ৮০৯ খৃষ্টাব্দে জুমার নামাজের পর বুখারায় (বর্তমান রাশিয়ায়) জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশব : ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের হাতেই তিনি লালিত- পালিত হন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। তাঁর পিতা একজন বড় মুহাদ্দিস ও বুযুর্গ ছিলেন। প্রচুর সম্পদের অধিকারী ছিলেন। তবে তাঁর সম্পদে হারামের সামান্যতম সন্দেহও ছিলো না। শিশু বয়সে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এতে তাঁর মা অত্যন্ত বিচলিত ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর মা একদিন স্বপ্নে দেখেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এসে বলছেন- 'তোমার ছেলের দৃষ্টিশক্তি ফিরে এসেছে।' ঘুম থেকে জেগে দেখেন সত্যি সত্যি পুত্র মুহাম্মদের চোখ ভালো হয়ে গেছে।
শিক্ষাজীবন : মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি কুরআন হেফজ করেন। তারপর দশ বছর বয়স থেকে তাঁর মনে হাদীস মুখস্থ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তখন তিনি হেজাযে ছয় বছর অবস্থান করে সেখানের মনীষীদের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেন । হাদীস সংগ্রহের জন্য তিনি কৃষ্ণা, বসরা, বাগদাদ, মিশর ও সিরিয়া ভ্রমণ করেছেন।
তাঁর উস্তাদগণের সংখ্যা : তিনি এক হাজার আশিজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস থেকে হাদীস শ্রবণ করেছেন।
তাঁর ছাত্রসংখ্যা : তাঁর থেকে ৯০ হাজার ছাত্র বুখারী শরীফের দরস গ্রহণ করেছেন।
বৈশিষ্টাবলী : ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে ছিলেন প্রবাদ পুরুষ। কুরআন-হাদীসের সঠিক মর্ম অনুধাবন, ইজতিহাদের ক্ষমতা, উন্নত মানসিকতা প্রভৃতিতে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিলো না। হাদীস ও ইতিহাস শাস্ত্রে তিনি ছিলেন তুলনাহীন। তিনি অত্যান্ত পরহেযগার, লজ্জাশীল এবং সাহসী মানুষ ছিলেন। তাঁর কোন সন্তান ছিলো না।
মনীষীদের দৃষ্টিতে ইমাম বুখারী : ইবনে খুযায়মা বলেন- আমি ইমাম বুখারীর চেয়ে দুনিয়াতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের বড় জ্ঞানী এবং তাঁর মতো হাদীস মুখস্থকারী কাউকে দেখিনি। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ইমাম বুখারী এই উম্মতের সবচেয়ে বড় জ্ঞানী । ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে এতো বেশী ভক্তি ও শ্রদ্ধা করতেন যে, একদিন তিনি ইমাম বুখারীকে লক্ষ করে বললেন- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি পৃথিবীতে আপনার মতো কেউ নেই । একবার তিনি ইমাম বুখারীর কপালে চুমো খেয়ে বললেন- হে মহান ওস্তাদ! মুহাদ্দিসগণের সম্রাট এবং ত্রুটি-বিচ্যুতিতে হাদীসের ডাক্তার! আমাকে সুযোগ দিন আমি আপনার পা চুম্বন করবো।
হাদীস শাস্ত্রে তাঁর অবদান : হাদীস শাস্ত্রে ইমাম বুখারীর বিস্ময়কর অবদান হলো বুখারী শরীফ রচনা । তিনি ছয়লক্ষ হাদীস থেকে বহু যাচাই-বাছাই করে ৯৮টি অধ্যায় এবং ৩৪৫০টি অনুচ্ছেদে মাত্র ৭২৭৫ টি হাদীস বুখারী শরীফে লিখেছেন । কা'বা শরীফ এবং মাকামে ইবরাহিমের মধ্যস্থল এবং রওযা শরীফ ও মসজিদে নববীর মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে বসে মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি কালজয়ী গ্রন্থ বুখারী শরীফ রচনা করেন ।
প্রত্যেক হাদীস লেখার পূর্বে তিনি গোসল করে দুরাকাত নফল নামায, ইস্তেখারা এবং পূর্ণরূপে তাহকীক করে হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন। বুখারী শরীফের পূর্ণ নাম- আল জামিউস সহীহ আল মুসনাদু মিন হাদীসী রাসুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আইয়ামিহী। এছাড়াও তিনি অনেক কিতাব রচনা করেছেন।
ইমাম বুখারীর মাযহাব : ইমাম বুখারী কোন্ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে বিশুদ্ধ অভিমত হলো তিনি বিশেষ কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। বরং মুজতাহিদে মতলক ছিলেন।
মৃত্যু : প্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ২৫৬ হিজরীর ১শাওয়াল ঈদুল ফিতরের রাতে খরতং নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
তথ্যসূত্র-
১. সিয়ার ১০/২৭৩, ২. তাহযীবুল কামাল ৮/৫৫২, ৩. তাযকিরা ২/১০৪, ৪.
তাহযীবুত তাহযীব ৭/৪১।