Narrow selection

নূহ আ. এর ছেলের ঘটনা - Nooh Nabir Seler Ghotona


12:41:47 06/11/2024

নূহ আ. এর ছেলের ঘটনা

 

নূহের ছেলের অবস্থা : এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। হযরত নূহ (আ) তুফানী শাস্তি অবতরণের সময় আপন ছেলের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করেছিনে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার তার সেই সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেন। এই বিষয়টি কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে বেশ গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে।

 

নূহ তার প্রভুকে সম্বোধন করে বললো, হে আমার প্রভু আমার ছেলে আমার সংসার  ভুক্ত এবং আপনার প্রতিশ্রুতি  সত্য এবং আপনি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক। তিনি বললেন, হে নূহ সে তোমার সংসারভুক্ত নয়। সে অসৎকর্ম পরায়ণ । সুতরাং যে বিষয়ে তোমার ইলম নেই সে নিয়ে আমাকে অনুরোধ করো না। আমি তোমাকে, উপদেশ দিচ্ছি তুমি যে অজ্ঞদের অন্তভুক্ত না হও।

 

সে বললো, হে আমার প্রভু, যে বিষয়ে আমার ইলম নেই সে বিষয়ে যাতে আপনাকে অনুরোধ না  করি এজন্য আমি আপনার পানাহ দিচ্ছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা ন করেন এবং দয়া না করেন তবে আমি ক্ষমিগ্রস্তদের গণ্য হব। বলা হল, হে নূহ অবতরণ কর আমার দেয়া শান্তিসহ এবং তোমার প্রতি ও যে সব কওম তোমার সঙ্গে আছে তাদের প্রতি কল্যাণসহ। (সূরা নূহঃ আয়াতঃ৪৫-৪৮)

 

উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে বুঝা যাচ্ছে হযরত নূহের প্রতি আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ছিল তিনি তাঁর সংসার পরিজনকে শাস্তি থেকে  মুক্তি দেবেন। তাই হযরত নূহ (আ) আপন ছেলের (কোরআন) জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান। কিন্তু প্রভুর কাছ থেকে তাকে সাবধান করে দেয়া হয়, যে বস্তুর জ্ঞান তোমার নেই সে সম্পর্কে এভাবে ফরিয়াদ করার কোন অধিকারও তোমার নেই। হযরত নূহ (আ) তার ভুল বুঝতে পারেন। তাই ক্ষমাপ্রার্থী হন আল্লাহর দরবারে। তখন আল্লাহ যে উত্তর দেন তাতে তিনি আশ্বস্ত হন। 

 

এখন লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, হযরত নূহ (আ) কোন অঙ্গিকারের উপর ভিত্তি করে ঐ প্রশ্ন। করেছিলেন? সে অ ঙ্গিকার কি পূর্ণ হয়েছিল? হযরত নূহ (আ) ঐ অঙ্গিকার অনুধাবন করতে কি ধরনের ভ্রান্তির শিকারে পরিণত হয়েছিলেন? আর আল্লাহর সতর্ক বানী উচ্চারণের পর তিনি কি ভাবে মূল বিষয়টি অনুধাবন করলেন?

 

অবশেষ আমার নির্দেশ আসলে ভূপৃষ্ঠ প্লাবিত হল। আমি বললাম, এতে উঠিয়ে নাও প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া, যাদের বিরুদ্ধে পূর্ব সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা ছাড়া তোমার সংসার পরিজনকে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। তার সঙ্গে ঈমান এনেছিল অল্প কয়েক জন। (সূরা হুদঃ আয়াতঃ ৪০)

 

উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, হযরত নূহকে আল্লাহতালা বললেন, তোমার সংসার পরিজনের মধ্যে যারা ‍মুক্তি প্রাপ্ত তাদেরকে জাহাজে উঠিয়ে নাও, কিন্তু তোমার সম্পূর্ণ সংসার তো আর মুক্তি প্রাপ্ত নয়, বরং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে যাদের উপর আল্লাহর আযাব নির্দ্ধারিত হয়ে গেছে।

 

যেহেতু হযরত নূহ (আ) তাঁর বিবির কাফির সুলভ আকায়েদ (বিশ্বাস) ও আমল (কর্ম) এর প্রতি দৃষ্টি রেখে সে যে আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তার একত্বকে স্বীকার করে নেবে সে মস্পর্কে পুরোপুরী হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, তাই তিনি উপারাক্ত ব্যতিক্রমের উপর লক্ষ্য শুধু নিজের বিবিকেই মনে করে ছিলেন এবং পুত্র স্নেহে বিভোর হয়ে এ ধারণা করেছিলেন যে, সেহেতু অল্প বয়স্ক তাই জাহাজে আরোহণ করলে মুমিনদের সুহবত পেয়ে হয়ত আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তার উপর কাফিরদের যে খারাপ প্রভাব পড়েছে তাও আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে।

 

জাহাজের উঠিয়ে নাও…………তোমার পরিবার পরিজনকে…আল্লাহর এই নির্দেশের সুযোগ হযরত নূহ (আ) আপন ছেলে কোরআনের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার মহাসম্মানিত নবীর এই আচরণ পছন্দ করেননি, তাই তাঁকে সতর্ক করে দেন এবং এ মর্মে যে সর্বদা আল্লাহর অহী প্রাপ্ত হয় এমন ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহর অহীর অপেক্ষা না করেই পূত্রস্নেহে বিভোর হয়ে অনুমান ভিত্তিক এমন একটা কর্ম করা (পুত্রের মুক্তির জন্য ফরিয়াদ জানানো) মোটেই উচিত হয়নি। কেননা মুক্তির প্রতিশ্রুতি মুমিনদের জন্য, আর কেনআন মুমিন নয় বরং কাফির। অতএব সে কাফিরদের সাথেই থাকবে তার মুক্তির জন্য ফরিয়াদ করা একজন নবীর পক্ষে মোটেই সাজে না। 

 

হযরত নূহের প্রতি আল্লাহর ঐ সম্বোধন শাস্তিস্বরূপ ছিল না বরং তা ছিল হাকীকত (মূলতন্ত্ব) প্রত্যক্ষ করার একটি আহবান, যা হযরত নূহ শুনেছিলেন এবং মানব সুলভ দুর্ভলতাকে মেনে নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হয়েছিলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও বরকত লাভ করে ধন্যও হয়েছিলেন।

 

অতএব তাঁর ফরিয়াদের মধ্যে যেমন অবাধ্যতার নাম নিশানা ছিল না তেমনি তা ছিল না নবীদের ইসমত (নিল্পাপ হওয়া) বিরোধী কোন চিহ্ন। তাই আল্লাহতাআ‘লা এটাকে অজ্ঞতা আখ্যা দিয়াছেন পাপাচার বা অবাধ্যতা আখ্যা দেননি।

 

মোটকথা হযরত নূহের কাছে যখন এ তত্ত্বটি স্পষ্ট হয়ে গেল মুক্তির প্রতিশ্রুতি বংশ বা গোত্রভিত্তিক নয় বরং ঈমান বিল্লাহ (আল্লাহর-উপর ঈমান) ভিত্তিক তখন তিনি তার কথার মোড় ঘুরিয়ে নিয়ে কেন আনকে ঈমান বিল্লাহের দিকে আহবান জানালেন। আশা করলেন, সেও মুমিন হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত জান্নাতের (পরিত্রাণ) অধিকারী হবে। কিন্তু সে হতভাগ্য উত্তর দিল, সে বললো, আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নেব যা আমাকে প্লাবন থেকে হেফাজত করবে।(সূরা হুদঃ আয়াতঃ৪৩)

 

তার উত্তরে শুনে হযরত নূহ (আ) বললেন, সে (হযরত নূহ) বললো, আজ আল্লাহর বিধান থেকে হেফাজত করবার কেউ  নেই, শুধু হেফাজত পাবে সে যাকে আল্লাহ দয়া করবেন। এরপর তরংগ ওদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হল।(সূরা হুদঃ আয়াতঃ ৪৩)

 

ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবনী

ইমাম শাফেয়ী রহ. এর জীবনী

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর জীবনী

ইমাম মালেক রহ. এর জীবনী

 

আমাদের ইউটিউব ইউটিব চ্যানেল


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color